বেগুনের রোগ ও তার প্রতিকার



১। রোগের নামঃ ঢলে পড়া বা গোড়া ও মূল পচা  (Damping off or foot and root rot ) রোগ
 
রোগের কারণঃ পিথিয়াম, রাইজোকটোনিয়া, ফাইটোপথোরা, ফিউজারিয়াম, স্কে¬রোশিয়াম (Phythium, Rhizotocnia, Phytophthora, Fusarium, Seclerotium etc.)  ইত্যাদি ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ উচ্চ আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা (২৭-৩১০ সেঃ), ঘন গাছ এবং স্যাঁতস্যাঁতে মাটি রোগ বিস্তারের অনুকুল পরিবেশ।
রোগের লক্ষণঃ
  •   এই রোগটি নার্সারীতে হয়ে থাকে। ইহা একটি মারাত্মক রোগ।
  •   বীজ অংকুরোদগমের সময় আক্রমণ শুরু করে।
  •   পরে চারার হাইপোকোটাইল, কান্ডের গোড়া ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত প্রধান মূলে আক্রমণ করে।
  •   আক্রান্ত চারার কান্ডের গোড়ার অংশে ফ্যাকাশে সবুজ ও বাদামী দাগ দেখা যায়।
  •   দাগটি কান্ডের উপরের দিকে ও নীচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
  •   চারার গোড়ার আক্রান্ত অংশের কোষ সমূহ পচে যায়।
  •   চারা ঢলে পড়ে ও মারা যায়।
প্রতিকারঃ 
    •   সুনিষ্কাশিত উচু বীজতলা তৈরী করতে হবে।
    •  বীজ বপনের ২ সপ্তাহ পূর্বে ফরমালডিহাইড দ্বারা বীজতলা শোধন করতে হবে।
    •   ট্রাইগোডারমা  দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
    •   বীজতলার পানি নিস্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
    •    তিন-চার ইঞ্চি পুরু করে কাঠের গুড়া বীজতলায়  বিছিয়ে দিতে হবে। একটু কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। একদিন পর জমি তৈরী করে বীজ লাগান যাবে।
    •  পলিথিন দ্বারা মাটি সোলারাইজেশন করতে হবে। ভালো করে তৈরী করে জমি কাঁদা করে নিতে হবে, স্বচছ পলিথিন সিট দিয়ে এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন কোন প্রকার ছিদ্র না থাকে। ৩-৪ সপ্তাহ রৌদ্রময় দিনে মাটি ঢেকে রেখে শুকাতে হবে।
    •    কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
    •    বীজ ৫২০ সেঃ তাপমাত্রায় গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে।
    •    কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) বা মেটালে´িল + মেনকোজেব  (রিডোমিল গোল্ড) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

২। রোগের নামঃ ফোমোপসিস ব্লাইট/ফল ও কান্ড পচা (Phomopsis blight/Fruit and stem rot) রোগ
 
রোগের কারণঃ ফোমপসিস ভেক্সান্স (Phomopsis vexans) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ
মাটি, আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ ও বীজের মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমিত হয়। অনুকুল আবহাওয়ায় গাছের পরিত্যক্ত অংশে প্রচুর পিকনিডিওস্পোর উৎপন্ন হয় এবং গাছে বিস্তৃত হয়ে রোগ সংক্রমণ করে। গাছে পুষ্টির অভাব হলে এ রোগের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। আর্দ্র আবহাওয়া ও অধিক তাপমাত্রায় (২৭-৩২০ সেঃ) এ রোগ দ্রুত বুিদ্ধ পায়।
রোগের লক্ষণঃ
  •   বীজ, চারা, কান্ড, ডাল, পাতা, ফুল ও ফল এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।
  •  গাছের পাতা যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারে।
  •  সাধারণত: নীচের পাতায় প্রথম দাগ দেখা যায়, পরে দাগগুলি স্পষ্ট গোলাকার ও ধূসর বাদামী রং ধারন করে।
  •  বয়স্ক দাগে অনেক কালো কালো পিকনিডিয়া দেখা যায়।
  •  বেশী আক্রান্ত পাতা হলুদ হয়ে মারা যায় ও ঝরে পড়ে।
  •  মাটির সংযোগস্থলে গাছের কান্ড হঠাৎ সরু হয়ে যায়।
  •  কান্ডের গোড়ার দিকে ক্যাংকার সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে বাকল খসে পড়ে এবং ভিতরের কাঠ বেরিয়ে পড়ে।
  •  আক্রান্ত স্থলের ক্ষতস্থানে ছত্রাকের কালো কালো পিকনিডিয়া দেখা যায়।
  •  ফল গাছে থাকতেই আক্রান্ত হয়।
  •  ফলের উপর ফ্যাকাশে কিছুটা বসানো দাগ পড়ে, আক্রান্ত স্থলে বাদামী ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও কালো ছত্রাক দৃষ্টিগোচর হয়।
  •         আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায়।
প্রতিকার ঃ 
    •      সুস্থ ও নীরোগ বেগুন হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
    •       কালো ও কুচকানো বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়।
    •       কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
    •     বেগুন পরিবারের সব্জি বাদ দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
    •    এই ছত্রাকটি আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহে বছরের পর বছর বেঁচে থাকে, তাই আক্রান্ত গাছ, ঝড়ে পরা পাতা, ডালপালা একত্র করে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
    •     কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমির সব গুলো গাছে স্প্রে করতে হবে।

৩। রোগের নামঃ পাতায় দাগ পড়া বা পাতায় দাগ (Leaf spot) রোগ
 
রোগের কারণঃ অলটারনারিয়া মেলোনজেনি ও সারকোস্পোরা মেলোনজেনি (Alternaria melongenae and Cercospora Melongenae) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ
সাধারণত গাছের রোগাক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ, বিকল্প পোষক ও বায়ুর সাহায্যে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায়। তাছাড়া পরিমিত পানি ও পুষ্টির অভাবে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
অলটারনারিয়া পাতার দাগ রোগের লক্ষণঃ  
  •   অলটারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমণের ফলে পাতায় কেন্দ্রীভূত বাদামী রংয়ের চক্রাকারে পেঁচানো গোলাকার দাগ পড়ে।
  •   দাগগুলো বেশীর ভাগই অসম, দাগ গুলোর ব্যাস ৪-৮ মিমিঃ এবং ইহা বেড়ে পত্রফলকের বড় একটা অংশ জুড়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে।
  •   মারাত্মক আক্রমণের ফলে পাতাগুলো ঝলসে যায় ও ঝরে পরে।
  •   ফল-এ বসানো দাগের সৃষ্টি করে।
  •   আক্রান্ত ফল হলুদ হয়ে অপ্রাপ্ত অবস্থায়ই ঝরে পড়ে।
সারকোস্পোরা পাতার দাগ রোগের লক্ষণঃ
  •   সারকোস্পোরা ছত্রাক দ্বারা আক্রমণের ফলে পাতায় কোনাকার থেকে অসম ধরনের দাগ পড়ে।
  •   পরে দাগ গুলি বড় হয় ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়।
  •   দাগগুলোর কেন্দ্রস্থল ধূসর ও চারদিক ফ্যাকাশে হলুদ বলয় দ্বারা ঘিরে থাকে।
  •   রোগের মাত্রা বেশী হলে পাতা মুচরিয়ে যায় এবং পরে ঝলসে গিয়ে ঝরে পড়ে।
  •   ফলে ফলন অনেক কমে যায়।
প্রতিকারঃ  
    •   ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
    •   পরিমিত সার ও সময়মত সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
    •   সময়মত ও সঠিক দূরত্বে বজায় রেখে চারা রোপন করতে হবে।
    •   অলটারনারিয়া পাতার দাগ রোগের এর জন্য ইপরোডিয়ন (রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা ডাইফেনোকোনাজল + এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন (এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার বেগুন গাছে ¯েপ্র করতে হবে।
    •   সারকোস্পোরা পাতার দাগ রোগের এর জন্য কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে।

৪।  রোগের নামঃ  ফিউজারিয়াম ঢলে পড়া (Fusarium wilt)
 
রোগের কারণঃ ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম (Fusarium oxysporum) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ 
রোগাক্রান্ত গাছ ও মাটি হতে সেচের পানি, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি  দ্বারা এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৮-৩০০ সেঃ), মাটির পিএইচ ৫.৫, অধিক আর্দ্রতা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটি এবং একই জমিতে বার বার বেগুন পরিবারের সব্জির চাষ এ রোগের উৎপত্তি ও বিস্তারের জন্য সহায়ক।
রোগের লক্ষণঃ
  •   চারা গাছ থেকে শুরু করে যে কোন অবস্থায় গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  •   চারা গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নীচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে।
  •   ধীরে ধীরে সমস্ত গাছই নেতিয়ে পড়ে ও মরে যায়।
  •   গাছের কান্ডে ও শিকড়ে বাদামী দাগ পড়ে।
  •   গাছে প্রথমে কান্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যায়।
  •   রোগ বৃদ্ধি পেলে সমস্ত পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ন শাখাটি মরে যায়।
  •   এই ভাবে একটা একটা শাখা মরতে মরতে সমস্ত গাছটাই ধীরে ধীরে মরে যায়।
  •   আক্রান্ত কান্ড চিরলে ভিতরে বাদামী দাগ দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
    •   সম্ভব হলে ফরমালিন দ্বারা মাটি শোধন করতে হবে।
    •   নীরোগ বীজতলার চারা লাগাতে হবে।
    •   রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বারি বেগুন ৬, বারি বেগুন ৭, বারি বেগুন ৮ চাষ করতে হবে।
    •   রোগাক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হবে।
    •   বুনো বেগুন গাছের কান্ডের সাথে কাংখিত জাতের বেগুনের জোড় কলম করতে হবে।
    •   জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
    •   জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে পটাশ সার প্রয়োগ করলে রোগ অনেক কম হয়।
    •   শিকড় গিট কৃমি দমন করতে হবে কারণ ইহারা ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে।
    •   কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

৫।  রোগের নামঃ  ব্যাকটেরিয়া ঢলে পড়া (Bacterial wilt) রোগ
 
রোগের কারণঃ রাল্সটোনিয়া সোলানেসিয়ারাম (Ralstonia Solanacearum) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ ইহা মাটিবাহিত রোগ, কৃষি যন্ত্রপাতি, আক্রান্ত চারা ও সেচের পানি দ্বারা দ্রুত রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় উপযুক্তভাবে বিকাশ লাভ করে। মাটির পিএইচ ৭.৪ এবং ৩৭০ সেঃ তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া সব চেয়ে বেশী আক্রমণ ঘটায়।
রোগের লক্ষণঃ
  •   গাছের যে কোন বয়সে রোগটি দেখা যায়।
  •   আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাটা খুর দ্রুত ঢলে পড়ে।
  •   আক্রান্ত গাছ বিকালের দিকে ঢলে পড়ে আবার সকালের দিকে সতেজ হয়।
  •   এভাবে ৩-৪ দিন পর সকালেও সতেজ হয় না এবং গাছ সবুজ অবস্থাতেই ঢলে পড়ে ও মরে যায়।
  •   গাছ মরার পূর্ব পর্যন্ত পাতায় কোন প্রকার দাগ পড়ে না।
  •   কান্ডের নিম্নংশ চিরলে উহার মজ্জার মধ্যে কালো রং-এর দাগ দেখা যায় এবং চাপ দিলে উহা হতে ধূসর বর্নের তরল আঠাল পদার্থ বের হয়ে আসে। এই তরল পদার্থে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে।
  •   আক্রান্ত গাছের ডাল বা গোড়া কেটে গ্লাসে পরিস্কার পানিতে রাখলে দুধের মত সাদা সুতার মত ব্যাটেরিয়াল ওজ বের হয়ে আসে।
প্রতিকারঃ
  •   সুস্থ চারা সংগ্রহ করতে হবে।
  •   রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন- বারি বেগুন ৬, বারি বেগুন ৭, বারি বেগুন ৮ চাষ করতে হবে।
  •   বুনো বেগুন গাছের কান্ডের সাথে কাংখিত জাতের বেগুনের জোড় কলম করতে হবে।
  •   শস্য পর্যায়ে বাদাম, সরিষা, ভূট্টা ইত্যাদি ফসল চাষ করতে হবে।
  •   জমিতে সর্বশেষ চাষের পূর্বে স্টেবল ব্লি­চিং পাউডার (২০-২৫ কেজি/হেক্টর হারে) মাটিতে মিশানোর সাথে সাথেই হালকা সেচ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
  •   ঢলে পড়া চারা বা গাছ দেখা মাত্র মাটি সহ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
  •   জমিতে পরিমিত সেচ দিতে হবে। বেগুনের জমি স্যাঁতস্যাঁতে রাখা যাবে না।
  •   শিকড় গিট কৃমি দমন করতে হবে কারণ ইহারা ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে।
  •   ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট (কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) ১ লিটার পানিতে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
  •   ব্যাকটেরিয়া নাশক স্ট্রেপ্টোমাইসিন সালফেট + টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড (ক্রোসিন-এজি ১০ এসপি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৮ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
বি:দ্র: ক্রোসিন-এজি ১০ এসপি ও কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি ঔষধ দুইটি পর্যায়ক্রমে একটা ব্যবহার করার পর আরেকটি ব্যবহার করতে হবে।

৬। রোগের নামঃ  ক্ষুদ্র পাতা/গুচ্ছ পাতা/তুলসি লাগা (Little Leaf ) রোগ
 
রোগের কারণঃ মাইকোপ্লাজমা (Mycoplasma) দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ সংস্পর্শ ও সিসটিয়াস ফাইসিটিস (Cestius phycitis) নামক পাতা ফড়িং-এর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। অধিক তাপমাত্রা ও একই জমিতে বার বার বেগুনের চাষ এ রোগ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। ধুতরা ও তামাক এ রোগের বিকল্প পোষকের মধ্যে অন্যতম। গাছের মাঝামাঝি বয়সে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণঃ 
  •   আক্রান্ত গাছের আগায় বা ডগায় অসংখ্য ছোট ছোট পাতা হয়।
  •   আক্রান্ত গাছের পাতার আকৃতি খুব ছোট হয়।
  •   আক্রান্ত পাতার ধার হলুদ বা সাদা রং ধারন করে।
  •   পাতার বোটা ও কান্ডের পর্বগুলি অত্যন্ত ছোট হয়ে যায়। অনেক সময় বোটা সহজে চেনা যায় না।
  •   পাতাগুলি গুচ্ছাকৃতির মনে হয় ও গাছ খর্বাকৃতির হয়।
  •   ফুলের বিভিন্ন অংশ রূপান্তরিত হয়ে পাতার আকৃতি ধারন করে।
  •   আক্রান্ত গাছ সাধারনত: বন্ধ্যা হয়, ফুল-ফল ধারন করে না।
  •   যদিও ২/১ টি ফল ধারণ করে তবে সে গুলো ছোট ও খুবই শক্ত হয়।
 
প্রতিকারঃ
    •   সুস্থ ও নীরোগ বেগুন হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
    •   চারা লাগানোর সময় চারা ১০০০ পিপিএম টেট্রাসাইক্লিন দ্রবনে ডুবিয়ে লাগাতে হবে এবং চারা রোপণের পর ১ সপ্তাহ পর পর ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
    •   আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করতে হবে।
    •   তামাক ও ধুতুরা জাতীয় আগাছা ধ্বংস করতে হবে।
    •   বাহক পোকা পাতা ফড়িং দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (অ্যাডমায়ার/ইমিটাফ) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ডায়াজিনন (৬০ তরল) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি হারে পানিতে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে।

৭। রোগের নামঃ  শিকড় গিট (Root Knot) রোগ
 
রোগের কারণঃ  মেলোয়ডোজাইন ইনকগনিটা এবং মেলোয়ডোজাইন যাভানিকা (Meloidogyne incognita & M. Javanica) নামক কৃমির দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ 
  •     মেলোয়ডোজাইন প্রজাতির কৃমি মাটিতে বসবাস করে। আক্রান্ত মাটি, শিকড়ের অংশ, বৃষ্টি ও সেচের পানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতির দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাধারণত ২৭-৩০০ সেঃ তাপমাত্রা, হালকা মাটি ও একই জমিতে বৎসরের পর বৎসর বেগুন বা টমেটো পরিবারের সব্জির চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রোগের লক্ষণ ঃ 
  •   এ রোগ চারা অবস্থা থেকেই শুরু হয়।
  •   মাটিতে অবস্থানকারী কৃমির আক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থলের কোষ সমুহ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও ঐ স্থান স্ফীত হয়ে নট বা গিটের সৃষ্টি করে।
  •   আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়।
  •   আক্রান্ত গাছ দুর্বল, খাট ও হলদেটে হয়ে যায়।
  •   গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে শিকড়ে গিটের উপস্থিতি দেখে সহজেই এ রোগ সনাক্ত করা যায়।
  •   চারা গাছ আক্রান্ত হলে সমস্ত শিকড় নষ্ট হয়ে যায় ও দিনের বেলায় গাছ ঢলে পড়ে।
  •   ফুল ও ফল ধারন ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়।
প্রতিকারঃ
  •   জমিতে সরিষা, বাদাম, গম, ভূট্টা প্রভৃতি শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
  •   ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
  •   জমি প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের কৃমি মারা যায়, তাই সুযোগ থাকলে বছরে একবার প্লাবিত করে রাখতে হবে।
  •   হেক্টর প্রতি ৫ টন অর্ধ পচা মুরগীর বিষ্ঠা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর জমিতে চারা রোপন করতে হবে।
  •   শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ভালভাবে শুকাতে হবে।
  •   রোগের লক্ষণ দেখা গেলে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি) অথবা ইসাজোফস (মিরাল ৩জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

source: krishibarta

Related Posts

0 Comments: