কলার পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনা

কলার ছাতরা পোকা

ক্ষতির প্রকৃতি ও লক্ষণ
এ পোকা আক্রান্ত গাছের বাড়ন্ত ডগা এবং মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে কচি ডগা ও মুকুল শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারন বিঘœ সৃষ্টি করে। ফল ধারণ করলেও খুবই দুর্বল হয়, সামান্য বাতাসেই কচি ফল ঝড়ে পড়ে। সাধারণত এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং ডগা ও মুকুলের বোঁটায় এমনভাবে গাদাগাদি করে থাকে যে আক্রান্ত ডগাটিই আর দেখতে পাওয়া যায় না। আক্রমণ মারাত্মক হলে এদের নিঃসৃত মধুরসে শু্যঁটিমোল্ড রোগ হয় ফলে পাতা কালো হয়ে যায় বলে ঠিকমতো খাদ্য তৈরি হয় না এবং আক্রান্ত গাছ অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির হয় এবং গাছে ফলন অত্যন্ত কমে যায়।

এ ধরনের ছাতরা পোকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক নিম্ফ বেশ কয়েকটি পরজীবী পোকা দ্বারা আক্রান্ত  হতে পারে। এদের মধ্যে Phygadeuon sp. (Ichneuminidae), Getonides perspicax Knal Ges Rodolia fumida এর কীড়া অন্যতম। পরজীবী পোকার ব্যাপক আক্রমণের ফলে প্রতি বছর এর আক্রমণের হার কমবেশি হতে দেখা যায়। এমনকি এক বছর এর ব্যাপক আক্রমণ পরিলক্ষিত হলেও পরবর্তী বছর কোনো ধরনের আক্রমণ নাও হতে পারে।  

দমন ব্যবস্থাপনা
১.  বাগানে জন্মানো আগাছা ও অন্যান্য পোষক উদ্ভিদ তুলে বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২. গ্রীষ্মকালে (বিশেষত সেপ্টেম্বর-অক্টেবর মাসে)  বাগান ভালো করে চাষ দিতে হবে বা পূর্ববর্তী বছরে আক্রান্ত গাছসমূহের গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে আলগা ও এপিঠ-ওপিঠ করে দিতে হবে যাতে মাটির নিচে থাকা ডিম উপরে উঠে আসে এবং পাখি ও অন্যান্য শিকারী পোকার কাছে তা উন্মুক্ত হয়, তাছাড়া রোদে পোকার ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

৩. যেহেতু নিম্ফগুলো গাছ বেয়ে ওপরে উঠে তাই নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ৮-১০ ইঞ্চি চওড়া প্লাস্টিকের পিচ্ছিল  ব্যান্ড গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা বার বার ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করে পরিশ্রান্ত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ডের নিচের অংশে নিম্ফগুলো জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর কীটনাশক ¯েপ্র করে দমন করা যায়। এসময় নিম্ফগুলোকে গাছে উঠা হতে নিবৃত করতে পারলে এ পোকার আক্রমণ পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব।

৪. যদি কোনো কারণে নিম্ফগুলো গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায় তবে শুধুমাত্র গাছের আক্রান্ত অংশে (Spot application) সংস্পর্শ ও পাকস্থলী (Contact and stomach) কীটনাশক বিধি মোতাবেক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে অল্প কিছু পরিমাণ নিম্ফ গাছ বেয়ে উপরে উঠে গেলে কেবলমাত্র গুঁড়া সাবান মিশ্রিত পানি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে) স্প্রে করে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। তবে ব্যাপকভাবে আক্রমণের ক্ষেত্রে কীটনাশক প্রয়োগের বিকল্প নেই। যেহেতু এ পোকাটির বহিরাবরণ ওয়াক্সি পাউডার জাতীয় পদার্থ দিয়ে সুরক্ষিত থাকে সেহেতু পরীক্ষিত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন করা দুরূহ।  এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি. হারে) এবং তার ৩-৪ দিন পর কার্বারাইল (সেভিন ৮৫ এসপি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) আক্রান্ত অংশে ¯েপ্র করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব।

কলার বিটল পোকা

 

আক্রমণে ক্ষতির লক্ষণ
১। বিটল পোকার কীড়া এবং পূর্ণ বয়স্ক পোকা উভয়ই কলাগাছের ক্ষতি করে।
২। এই পোকার আক্রমণে পূর্ণবয়স্ক পোকা প্রথমে কলা গাছের কচি হলুদ পাতা কুরে কুরে খায়। যার ফলে কলা গাছের কচি পাতাতে কালো দাগ পড়ে।
৩। এছাড়াও পরবর্তীতে কলা গাছের পাতা বড় হলে দাগও বড় হয়। ফলে পোকা আক্রান্ত গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।
৪। পূর্ণাঙ্গ বিটল পোকা কচি কলার সবুজ অংশ চেঁছে খেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ তৈরি করে।
৫। কলা বড় হওয়ার সাথে সাথে উক্ত তৈরি করা দাগগুলি আকারে বড় হয়। পরবর্তীতে এই দাগ কালচে বাদামী রঙ ধারণ করে।
৬। আক্রান্ত গাছের দাগযুক্ত কলা বসন্ত রোগের মত দেখায়।
৭। বিটল পোকার আক্রমণ বেশি হলে আক্রান্ত ফল আকারে ছোট মনে হয় এবং ফলন কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১। প্রয়োজনে মুড়ি ফসল চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কলার বাগান সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছের মরা পাতা এবং অন্যান্য আগাছা একত্র করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। কলা বাগানে আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন করতে হবে।
৪ কলা বাগানে আলোর ফাঁদ স্থাপন করতে হবে।
৫। কলার মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে দুই মুখ খোলা ছিদ্র বিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে কলার মোচা ঢেকে দিতে হবে।
৬। এরপর কলার কাদি সম্পূর্ণ বের হবার এক মাস পর উক্ত পলিথিন খুলে দিতে হবে।
৭। গাছে কাঁদি আসার আগ পর্যন্ত কচি পাতার গোড়ায় বিটল পোকা লুকিয়ে থাকে। ম্যালাথিয়ন অথবা নগস ভালভাবে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
৮। এ পোকা কার্বাইল গ্রুপের যেমন সেভিন ১.৫ গ্রাম প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে একবার কাদির প্রথম কলা বের হওয়ার পর একবার এবং সম্পূর্ণ কলা বের হওয়ার পর আরও একবার মোট ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
৯। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে আইসোপ্রোকার্ব গ্রুপের (যেমন মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি ০২ গ্রাম/ লিটার) অথবা প্রতি লিটার পানিতে ০২ গ্রাম একতারা ২৫ ডব্লিউজি  কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কলার রোগ ও তার প্রতিকার

কলার পানামা রোগ (Panama Disease of Banana)

Fusarium oxysporum  নামক ছত্রাকের কারণে করার পানামা রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণঃ
    ১) এ রোগে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে।
    ২) পরে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে ও গাছ মারা যায়।
    ৩) কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটেও যায় এবং ভিতরের ভাস্কুলার বান্ডেল হলদে বাদামি বর্ণ ধারণ করে।

প্রতিকারঃ
    ১) আক্রান্ত গাছ গোড়া থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
    ২) রোগমুক্ত গাছ থাকে চারা রোপণ করতে হবে
    ৩) আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ না করা।
    ৪) ব্যাপক হারে কলাগাছ আক্রান্ত হলে কমপক্ষে ২ বছর ঐ জমিতে কলা চাষ করা বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
    ৫) চুন প্রয়োগ করে মাটির পি-এইচ (PH) বৃদ্বি করতে হবে। অথবা কলার চারা লাগানোর ১৫ দিন পূর্বে প্রতি গর্তে ২০০-৩০০ গ্রাম ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
    ৬) চারা লাগানোর পুর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া এবং ১০-১২ দিন পর চারা রোপণ করা।
    ৭) চারা রোপণের ১ মাস পরে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের চারিদিকে প্রতি মাসে একবার করে প্রয়োগ করতে হবে।

করার গুচ্ছমাথা রোগ (Bunchy Top Disease of Banana)

 


এটি ভাইরাসজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

    ১) এ রোগের কারণে কলা গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়।
    ২) পাতা আকারে খাটো, অপ্রস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে।
    ৩) কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাকানো এবং হলুদ রংয়ের হয়। পাতার শিরার মধ্যে ঘন সবুজ দাগ পড়ে।
প্রতিকারঃ
    ১) আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলা।
    ২) সুস্থ সবল চারা রোপণ করা।
    ৩) ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকা ও থ্রিপস) দমনের জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক ইমিডাক্লোরপ্রিড ( এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার, বাম্পার, এমপায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে বা অনুমোদিত মাত্রানুযায়ী স্প্রে করতে হবে।

কলার সিগাটোকা রোগ (Sigatoka Disease of Banana)

 

কলা গাছে পাতায় দাগ বা সিগাটোকা (Leaf spot or Sigatoka) রোগটি সারকোস্পোরা মুসি (Cercospora musae) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণ:

    ১) এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল গাছের তৃতীয় ও চতুর্থ কচি পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ পড়ে।
    ২) দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় ও বাদামী ঝলসানো রঙ ধারণ করে।
   ৩) বেশি আক্রান্ত পাতা আগুনে ঝলসানো বা পোড়া মনে হয়। আক্রান্ত গাছের ফলন ১০-১৫% কম হয়।
    ৪) তীব্র আক্রমণে অনেক পাতা সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার:

   ১) রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে।
    ২) পাতলা করে গাছ লাগাতে হবে।
   ৩) আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে রোগের তীব্রতা কমানো যায়।
    ৪) ২-৩ মাস পর পর গাছের নীচের দিকের পাতাগূলো সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
   ৫) জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
    ৬) রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে গাছে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

 Source: Internet

পেয়ারার রোগ ও তার প্রতিকার

এ্যানথ্রাকনোজ

 

এ্যানথ্রাকনোজ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। গাছের পাতা, কান্ড, শাখা ও ফল এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগ হলে ফলের গায়ে ছোট ছোট বাদামী দাগ পড়ে। তাছাড়া ফল শক্ত, ছোট ও বিকৃত আকারের হতে পারে। ফল পাকা শুরু হলে দাগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ফলটি ফেটে বা পঁচে যায়। আক্রান্ত পাতায় মরিচা পড়ার মত দাগ দেখা যায়। কচি ডাল আক্রান্ত হলে তাতে বাদামী দাগ পড়ে এবং ডালটি মারা যায়। বর্ষাকালেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা যায়। গাছের পরিত্যক্ত শাখা প্রশাখা, ফল ও পাতায় এ রোগের জীবানু বেঁচে থাকে। বাতাস ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ্যানথ্রাকনোজ রোগ ছড়ায়।
এ্যানথ্রাকনোজ প্রতিকার
গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে ফল মার্বেল সাইজ হওয়ার পর থেকে নোইন/অটোস্টিন অথবা পিডিয়ন বা রোভরাল বা একরোবেট এমজেড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম নোইন ৫০ ডব্লিউপি অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি বা কোগার ২৮ এসসি বা নাভারা বা কারিশমা প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০১ মিলি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ৩-৪ বার ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।


 ফিউজারিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ

 

ফিউজেরিয়াম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ সমস্যা হয়। প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পরে শুকিয়ে যায়। এভাবে পাতার পর প্রশাখা-শাখা এবং ধীরে ধীরে সমস্ত গাছই ৮-১০ দিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে ও মারা যায়।

ফিউজারিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ প্রতিকার
এ রোগের কোন প্রতিকার নেই। তাই একে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।মাঠে/বাগানে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন আদিজোড় যেমন পলিপেয়ারার সাথে কলম করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।বাগানের মাটিতে অম্লত্বের পরিমাণ কমানোর জন্য চুন প্রয়োগ করতে হবে।


 শুটিমোল্ড

 

শীতের সময় সাদামাছি পোকা ও মিলিবাগ এর আক্রমণের ফলে পেয়ারা গাছের পাতা ছাই সদৃশ পদার্থ দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। এটি শুটিমোল্ড নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতা ঝরে পড়ে ও গাছ দুর্বল হয়ে যায়।

শুটিমোল্ড প্রতিকার
সাদা মাছি পোকা ও মিলিবাগ দমন করতে হবে। নোইন/অটোস্টিন অথবা পিডিয়ন বা রোভরাল বা একরোবেট এমজেড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম নোইন ৫০ ডব্লিউপি অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি বা কোগার ২৮ এসসি বা নাভারা বা কারিশমা প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০১ মিলি হারে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।


তথ্যের উৎসঃ ইন্টারনেট

পেয়ারার পোকা মাকড় দমন

 হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি

 
সাদা মাছি পোকা পাতার নিচের দিকে আক্রমণ করে রস চুষে খায়। এর ফলে পাতায় সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং পাতা ঝরে যায়।

সাদা মাছি দমন
সাদা মাছি দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে পাঁচ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে গাছে স্প্রে করা।

ফল ছিদ্রকারী পোকা

 

ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে ফলের গায়ে কোথাও না কোথাও ছিদ্র হয়, ফল বিকৃত হয়ে যায়, ছিদ্রের মুখ দিয়ে পোকার মল পড়তে থাকে। কিন্তু ফলের মাছি পোকা আক্রমণ করলে গায়ে কোনো ছিদ্র হয় না, ফলও বিকৃত হয় না, রঙও ঠিক থাকে। শুধু ভেতরটা নষ্ট হয়ে যায়।

ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন
ম্যালথিয়ন ৫৭-ইসি বা ফেনিট্রথিয়ন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। গাছের নিচে ঝরে পড়া কোনো ফল রাখা চলবে না।

 মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা

 

এ দেশের অধিকাংশ পেয়ারা গাছেই ছাতরা পোকা দেখা যায়। আক্রান্ত ডাল বা পাতায় এরা দল বেঁধে আঁকড়ে থাকে। সাদা রংয়ের এ পোকাগুলিকে দেখতে অনেকটা সাদা ছাতা বা তুলার মত দেখায়। এরা কচি পাতা, বিটপ, প্রশাখা এমনকি ফুল থেকেও রস চুষে খেতে থাকে। ফলে আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়।

ছাতরা পোকা দমন
যদি আক্রমণের মাত্রা কম থাকে তবে আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলা ভাল। আক্রান্ত হলে ২০ মিলি ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 দয়ে পোকা (ডরসিকা ম্যাঙ্গিফেরা ও প্ল্যানোকাক্কাস সিট্রি)

 

দয়ে পোকার পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ দশা গাছের সবুজ অংশের রস শোষণ করে এবং সাদা আঁশের মতো আচ্ছাদন সৃষ্টি করে। দয়ে পোকা আক্রান্ত গাছের অংশ শুকিয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে নেমে মাটিতে ডিম পাড়ে ও ডিসেম্বর পর্যন্ত মাটিতেই থাকে।

দয়ে পোকা দমন
নিয়মিত বাগান পরিষ্কার রাখা ও আগাছামুক্ত রাখা। গ্রীষ্মকালীন চাষ দেওয়া, এতে রোদের তাপে মাটিতে অবস্থিত ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও খুব বেশি আক্রমণ দেখা দিলে কীটনাশক যেমন অ্যাসিফেট ৭৫% ডব্লুপি (০.৭৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে) অথবা ডাইমিথোয়েট ৩০% ইসি (২ মিলি প্রতি লিটার জলে) স্প্রে করতে হবে।

 তথ্যের উৎসঃ ইন্টারনেট

লিচুর পোকা মাকড় দমন

 লিচুর গান্ধিপোকা

 

এটি একটি গৌণ ক্ষতিকর পোকা। তবে লিচু উৎপাদনকারী দেশে এটি আস্তে আস্তে মুখ্য ক্ষতিকর পোকা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশের সব লিচু উৎপাদনকারী এলাকায় গাছের নরম অংশ যেমন বর্ধনশীল ডগা, পাতা ও ফলের বোঁটা এবং কচি ডালের কোষের রস চুষে খাচ্ছে। ব্যাপক আক্রমণে বাড়ন্ত ফল ও ডগা শুকিয়ে যায় ফলে গাছে কম ফল ধরে। অনেকগুলো পোকা যখন বাড়ন্ত ফলে জমাট বেঁধে আক্রমণ করে তখন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফল ঝরে পড়ে। কাঠলিচু, রাম্বুটান, গোলাপ, ডালিম, ইউক্যালিপটাস, জাম্বুরা এর বিকল্প পোষক। এরা সাধারণত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেখা দেয় আর আগস্টের শেষ সপ্তাহে পূর্ণ বয়স্ক পোকাগুলো শীতনিদ্রায় চলে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ পোকা ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। এ বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন লিচু উৎপাদনকারী এলাকা যেমন- পাবনা, দিনাজপুর এ পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে বলে মাঠ থেকে সংবাদ পাওয়া গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ন্ত লিচু রস চুষে খাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এবং আক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে ফল শুকিয়ে ঝরে পড়ছে।

ক্ষতিকর এ পোকার স্ত্রী পোকাগুলো পাতার নিচের দিকে গোলাকার ফ্যাকাসে গোলাপি বর্ণের ১০-১২টি ডিম গুচ্ছ আকারে পড়ে থাকে। ডিম, নিম্ফ (বাচ্চা কীড়া) ও পূর্ণাঙ্গ পোকা এ তিনটি স্তরে লিচুর গান্ধিপোকা জীবনচক্র সম্পন্ন করে। নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পোকা রস চুষে খেয়ে লিচু গাছের ক্ষতি করে থাকে। নিম্ফ বা বাচ্চার পাঁচটি স্তর দেখা যায়। নিম্ফের প্রথম স্তর দেখতে প্রায় অর্ধ আয়তাকার বাদে বাকি চারটি স্তরই গাঢ় লাল এবং অর্ধ আয়তাকার দেখতে হয়ে থাকে। পুরুষ পোকা ৪৩-৪৫ দিন আর স্ত্রী পোকা ৪৭-৪৮ দিন বেঁচে থাকে। সদ্য ফোটা নিম্ফ (বাচ্চা) ময়লাটে সাদা এবং নরম দেহের পোকা কিন্তু পোকার রং কয়েকদিনের মধ্যেই হলদে-লাল হতে শুরু করে। স্ত্রী পোকাগুলো বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি এবং আক্রমণ তীব্র হলে লিচুর ফলন শতকরা ৮০ ভাগের বেশি কমিয়ে দিতে পারে।

গান্ধিপোকার দমন ব্যবস্থাপনা
শীতকালে গাছকে ঝাঁকিয়ে পোকা সংগ্রহ করে কেরোসিনে ডুবাতে হয়, কিন্তু এটি অল্প জায়গায় ছোট গাছের জন্য প্রযোজ্য। গান্ধিপোকার ডিম গুচ্ছ আকারে দেখা গেলে সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। বাচ্চা বা পূর্ণ বয়স্ক পোকা দমনে কিছু কিছু ছত্রাক, পাখি এবং লাল পিঁপড়া জৈবিক দমনে সাহায্য করে থাকে বলে জানা যায়। যে কোনো ভালোমানের অন্তর্বাহী বালাইনাশক লিচুর গান্ধি নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও বালাইনাশক ও এর মাত্রা নির্ধারণে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কার্বারিল গ্রুপের সেভিন/এসিকার্ব এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে অথবা ক্লোরোপাইরিফস গ্রম্নপের ডারসবান/মর্টার/এসিমিক্স/নাইট্রো এক লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে যে কোনো একটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা যায়, স্প্রেকৃত রাসায়নিক বালাইনাশকের কার্যকারিতা বছরের বিভিন্ন সময় দেহের ফ্যাটের ওপর নির্ভর করে।

ফল ছিদ্রকারী পোকা

 

লক্ষণ ও ক্ষতির ধরণ
এ পোকা ফলের বোঁটার কাছে ছিদ্র করে এবং ভেতরে ঢোকে এবং বীজকে আক্রমণ করে। পরে ছিদ্রের মুখে বাদামি রঙের এক প্রকার করাতের গুঁড়ার মতো মিহি গুঁড়া উৎপন্ন করে। এতে ফল নষ্ট হয় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১) লিচু বাগান নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
২)আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট বা পুঁতে ফেলা।
৩)লিচু গাছ তলায় শুকনো খড়ে আগুন দিয়ে তাতে ধুপ দিয়ে ধোঁয়া দিতে হবে। এতে এ পোকার মথ বা কীড়া বিতড়িত হবে। ফলে লিচুর মধ্যে ডিম পাড়বে না।
৪) বোম্বাই জাতে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয় তাই আক্রমণপ্রবণ এলাকায় চায়না-৩ জাত রোপণ করা।
৫) নিম তেল বা নিমকবিসিডিন (০.৪%) পানিতে গুলে স্প্রে করে দেখা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে ২ মিলি লেবাসিড বা সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

 লিচুর মাইট বা মাকড়


 

লক্ষণ ও ক্ষতির ধরণ
পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা মাকড় একটি শাখার কটি পাতায় আক্রমণ করে ও পাতার রস চুষে নেয়। ফলে আইরিনিয়াম নামক বাদামি রংয়ের মখমলের মতো এক ধরনের আবরণ তৈরি হয়। পাতা ভেতরের দিকে কুঁকড়িয়ে গিয়ে শেষে আক্রান্ত পাতা শুকাতে থাকে।
দমন ব্যবস্থাপনা
১) লিচু বাগান নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
২) আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলা।
৩) জুন ও আগস্ট মাসে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেমন নিমবিসিডিন (০.৪%)। মধ্য ভাদ্র হতে কার্তিক মাস এবং মাঘের শেষ হতে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত গাছে ২/৩ বার মাকড়নাশক ব্যবহার করা যেমন ওমাইট ২ মিলি বা ২ গ্রাম থিওভিট বা কুমুলাস বা রনভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা।

 মিলিবাগ পোকা।

 

লক্ষণ ও ক্ষতির ধরণ
এরা পাতার রস ও ডালের রস চুষে নেয় ফলে গাছ দুর্বল হয়। পোকার আক্রমণ পাতা ও ডালে সাদা সাদা তুলার মতো দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়া দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১) আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস স্বচ্ছ ১৫.২০ সেমি উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে।
২) হাত দিয়ে ডিম ও বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
৩) জৈব বালাইনাশক নিবিসিডিন (০.৪%) ব্যবহার করা।
৪) আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি রগর, টাফগর, সানগর বা সুমিথিয়ন এবং ১.৫ মিলি মিপসিন বা সপসিন মিশিয়ে স্প্রে করা।

 তথ্যের উৎসঃ ইন্টারনেট

লিচুর রোগ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

লিচুর পাতা পোড়া রোগ

লক্ষণঃ
১। এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতায় প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামী হয় ।
২। পাতা শুকিয়ে যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত ডাল বা পাতা অপসারণ করা ।
২। ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
সাবধানতাঃ
বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
করনীয়ঃ
১। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন ।
২। পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন ।
৩। নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

লিচুর পাতার দাগ রোগ

 

লক্ষণঃ
১) এ রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।
২) এতে পাতায় বাদামী থেকে কালো দাগ হয়।কচি পাতা আক্রান্ত হলে পাতা কুঁচকে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১) আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২) গাছের বয়স অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করা।
৩) বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
৪)  ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন।
৫) পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৬) নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

লিচুর পাউডারি মিলডিউ রোগ

 

 লক্ষণঃ
রোগের জীবানু মুকুলে, কচি ফলে এবং নতুন ডগায় সাদা পাউডারের আবরণ সৃষ্টি করে । হাত দিয়ে ঘসলে পাউডার সরে যায় । দৃশ্যমান সাদা পাউডার প্রকৃতপক্ষে ছত্রাকজালিকা এবং বীজ অনুর সমষ্টি । জীবানু মুকুল থেকে অতিরিক্ত খাদ্য রস শোষণ করার ফলে আক্রান্ত মুকুল শুকিয়ে যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
পানি স্প্রে করলে রোগের প্রকোপ কমানো যায় । মুকুলে সাদা পাউডারের আবরণ দেখা দিলেই ম্যাকভিট ৮০ ডিএফ/ম্যাকসালফার ৮০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে ।

 লিচুর এনথ্রাকনোজ রোগ

 

লক্ষণঃ
১। এ রোগের আক্রমণে ফলের গায়ে ছোট ছোট বাদামী দাগ ক্রমে ক্রমে বড় হয়।
২। ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় ফল ফেটে যায়।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত ফল, পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২। গাছের নিচে পড়া ফল, পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা ।
৩। ফল মটর দানার মত আকারের হলে - টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।
সাবধানতাঃ
১। বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না ।
২। স্প্রে করার এক মাসের মধ্যে ফল খাওয়া যাবেনা ।
করনীয়ঃ
১। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন ।
২। পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন ।
৩। নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

 লিচুর সুটিমোল্ড রোগ

 

রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ : পাতায়, ফলে ও কান্ডে কাল ময়লা জমে। মিলিবাগ বা খোসা পোকার আক্রমণ এ রোগ ডেকে আনে।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে :  বাড়ন্ত পর্যায় , ফলের বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা , ফল
ব্যবস্থাপনা :
প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।বালাইনাশকস্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


 Source: Internet

আমের ক্ষতিকর পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

আমের শোষক পোকা

 
এ পোকা অন্য সব পোকার চাইতে আমের বেশী ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশের সর্বত্র এবং আমের সবজাতে এ পোকা আক্রমণ করে থাকে। সারা বছর আমগাছে এই পোকাগুলি দেখা যায়।

ক্ষতির ধরণ

আম গাছে কচি পাতা বা মুকুল বের হওয়ার সাথে সাথে এগুলি সক্রিয় হয়ে উঠে। এ পোকা নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় আমগাছের সকল কচি অংশ থেকে রস চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। নিম্ফ গুলি আমের মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ পরিমান রস শোষন করে খায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয় যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে যার উপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ২০-১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া হপার আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

প্রতিকার

ক) আম বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশেষ করে গাছের ডাল পালা যদি খুব ঘন থাকে তবে প্রয়োজনীয় পরিমান ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে
খ) অমের মুকুল যখন ৮/১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন একবার এবং আম মটর দানার মত হলে আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন রাইজ) মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে
গ) আমের হপার পোকার কারণে সুটিমোল্ড রোগের আক্রমণ অনেক সময় ঘটে তাই সুটিমোল্ড দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ঔষধ (যেমন ঔষধ) ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফল ছিদ্রকারী পোকা

 

আমের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ১৯৯৫ সাল থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ এর বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্য করা যায়। এর পর প্রায় প্রতি বছর এ পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। বর্তমানে আম চাষীদের নিকট এ পোকা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

ক্ষতির ধরণ

আম মার্বেল আকারের হলেই এ পোকার আক্রমন শুরু হয় এবং আম পাকার পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার উপর ডিম পাড়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়া খুব ছোট বিন্দুর মত আম ছিদ্র করে আমের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং আমের শাঁস খেতে থাকে। পরে আটি পর্যন্ত আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানটি কাল হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর আক্রমণের ফলে পচন ধরে যায়। বেশী আক্রান্ত আম ফেটে যায় এবং গাছ থেকে পড়ে যায়।

প্রতিকার

ক) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং গাছের মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। ফলে পোকার আক্রমণ কম হবে।
খ) আম বাগান নিয়মিত চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
গ) পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়া মাত্র ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে অথবা কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। এক্ষেত্রে হারভেস্ট-এ ভাল ফল পাওয়া যায়।

মাছি পোকা

 

মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ক ও পাকা আম আক্রান্ত হয়। ফজলী, ল্যংড়া, খিরসাপাত সহ বিভিন্ন জাতের পরিপক্ক ও পাকা আম গাছে থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরণ

স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ক ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা বুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতরে সাদা রং এর কীড়া দেখা যায়। বেশী আক্রান্ত আম অনেক সময় পঁচে যায়। সাধারণতঃ এ পোকা আমের উপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে।

প্রতিকার

ক) আম গাছে পাকার আগেই পরিপক্ক অবস্থায় পেড়ে আনা
খ) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে
গ) প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে ০.৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষ টোপ বাগানে রেখে মাছিপোকা দমন করা যেতে পারে
ঘ) আম পরিপক্ক ও পাকার মৌসুমে আমবাগানে ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে
ঙ) আম পরিপক্ক ও পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বরা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে
চ) ফেরোমনের ফাঁদও ( মিথাইল ইউজেনল) ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে প্রচুর পুরুষ পোকা মারা যাবে এবং বাগানে মাছি পোকার আক্রমণ কমে যাবে।

কান্ডের মাজরা পোকা

 

বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশী এ পোকার আক্রমণ দেখা যায় এবং খুব কম সংখ্যক গাছে আক্রমণ দেখা যায়।। তবে অনেক সময় সিরিয়াস পেস্ট হিসাবেও দেখা যায়।

ক্ষতির ধরণ

এ পোকা আম গাছের কান্ড ও শাখাকে আক্রমণ করে। আক্রমণ স্থান দিয়ে পোকার মল নির্গত হয়। ছোট গাছ আক্রান্ত হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রান্ত শাখাগুলি সহজেই ভেঙ্গে যায়।

প্রতিকার

ক) গাছের কান্ড বা শাখায় কোন ছিদ্র দেখা গেলে ঐ ছিদ্র পথে সূঁচালো লোহার শিক বা সাইকেলের স্পোক ঢুকিয়ে পোকাটির কীড়াকে খুঁচিয়ে মেরে ফেলতে হবে
খ) ছিদ্রটি ভালভাবে পরিষ্কার করে তার মধ্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ভিজানো তুলা ঢুকিয়ে ছিদ্রের মুখ কাদা দিয়ে ভালবাবে বন্ধ করে দিতে হবে।

পাতা কাটা উইভিল

 

নার্সারীতে চারা গাছের কচি পাতায় এই পোকার আক্রমণ বেশী দেখা যায়। তাছাড়া অনেক সময় বড় আম গাছের কচি পাতা কাটতেও দেখা যায়। এ পোকা সাধারণতঃ আম ছাড়া অন্য কোন গাছের ক্ষতি করে না।

ক্ষতির ধরণ

এ পোকা আম গাছের শুধু কচি পাতা কেটে ক্ষতি করে। কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্যশিরার উভয় পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে এবং পরে পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেটে দেয়। ভালো করে দেখলে কাঁচি দ্বারা কেউ কেটেছে বলে মনে হয়। এ পোকার আক্রমণে গাছের নতুন পাতা ধবংস হয়। বেশী আক্রমণে একটি ছোট গাছ পাতাশূন্য হতে পারে।

প্রতিকার

ক) নতুন কাটা পাতা মাটি থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) গাছে কচি পাতা বের হওয়ার সংগে সংগে ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/ লিটার পানিতে স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। তাছাড়া কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে অথবা কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলেও পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। এক্ষেত্রে হারভেস্ট-এ ভাল ফল পাওয়া যায়।

পাতার গল মাছি 

 

ক্ষতির ধরণ
কয়েক প্রকারের গল সৃষ্টিকারী পোকা আম গাছের কচি পাতায় আক্রমণ করে তাতে বিভিন্ন আকারের গল রোগের সৃষ্টি করে। পাতার উপর কিংবা নিচের পৃষ্ঠে কিংবা উভয় পৃষ্ঠে গল দেখা যায়। গল গুলি বিভিন্ন রং এর হয় যেমন- ধুসর, বাদামী, সবুজ, লাল ইত্যাদি। স্ত্রী পোকা আমের কচি পাতার নীচের দিকে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে ম্যাগোট বা বাচ্চা পোকা বের হয়। পরে পাতার কোষ এবং টিস্যু সমুহে প্রবেশ করে রস খাওয়ার কারণে পাতায় গলের সৃষ্টি হয়। পাতায় গলের পরিমান বেশী হলে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যেতে পারে।

প্রতিকার

ক)আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) ঘনভাবে রোপণকৃত আম বাগানে ছায়া থাকে বিধায় আম গাছের পাতায় গলের আক্রমণটা বেশী হয়। এজন্য আম পাড়ার পরে কিছু ডালপালা ছাঁটাই করা ভাল
গ) ডাইমিথয়েট জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করলে আমের পাতায় গল মাছি দমন করা যায়। অথবা ডেল্টামেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক যেমন মেজর ১ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এপসিলা পোকা

 

এপসিলা আমের একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। বর্তমানে এ পোকার আক্রমণ তেমন একটা দেখা যায় না। তবে এপসিলা পোকার আক্রমণ হঠাৎ করে বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও অল্প করে হলেও দেখা যায়। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় এটি তাবিজ পোকা নামে অনেকের নিকট পরিচিত।

ক্ষতির ধরণ

কচি পাতায় পাড়া ডিমের ভিতর ভ্রুণাবস্থায় থাকা প্রথম ধাপের নিম্ফ পাতার ভিতর থেকে রস চুসে খায় এবং এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে যার কারণে পত্রকক্ষে সুচালো মুখবিশিষ্ট সবুজ রংয়ের মোচাকৃতি গলের সৃষ্টি হয়। এই গল সৃষ্টি হওয়ার কারণে পত্রকক্ষে আর কোন নতুন পাতা বা মুকুল বের হতে পারে না। গাছে বেশী পরিমানে গল সৃষ্টি হলে গলযুক্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও সেই সাথে আমের ফলন কমে যায়।

প্রতিকার

ক) অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সমস্ত আম গাছ থেকে নিম্ফসহ গল (তাবিজ) সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) মার্চ এপ্রিল মাসে আম গাছের পাতায় এপসিলা পোকার ডিম পাড়ার ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাওয়া গেলে প্রতি লিটার পানির সাথে ডাইমিথয়েট জাতীয় কীটনাশক ২মিলি/ লিটার হারে মিশিয়ে পাতা ও ডালপালা ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। অথবা ডেল্টামেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক যেমন মেজর ১ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।


উৎসঃ ইন্টারনেট

আমের রোগ ও তার দমন

আমের মুকুল/ফুল ও ফল ঝরা রোগ

ছবিঃ আমের মুকুল ও গুঁটি ঝরা রোগ

 

আম গাছে সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা না করায় আমের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং সামগ্রিক ভাবে আমের উৎপাদন ব্যহত হয়। আম উৎপাদনকারী বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় নিম্নরূপ-
ক) ফসল সংগ্রহের পর আগষ্ট মাসে রোগক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা প্রশাখা এবং পরগাছা ছেটে গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে ।
খ) সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিম্ন বর্ণিত উপায়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।
গ) আমের মুকুল আসার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড় ইঞ্চি হলে (অবশ্যই ফুল ফুটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (ইমিটাফ, টিডো, কনফিডর) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে অথবা সাইপারমেথ্রিন (রেলোথ্রিন, কট, রিপকর্ড) ১০ ইসি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে বা অন্যান্য অনুমোদিত কীটনাশক এবং এথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্য ম্যানকোজেব (ইন্ডোফিল, ডাইথেন, কম্প্যানিয়ন ) এম-৪৫ নামক বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে আম গাছের মুকুল, পাতা, শাখা প্রশাখা ও কান্ডে ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। এরপর ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে আম মটরদানা আকৃতির হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক উল্লিখিত মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুকুল পাতা ও কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে আর একবার স্প্রে করতে হবে। আম গাছে হপার পোকা এবং এথ্রাকনোজ রোগের হাত থেকে মুকুল রক্ষা করার জন্য উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ২ (দুই) বার কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের একত্রে প্রয়োগ করাই যথেস্ট। তবে প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক স্প্রে করা যেতে পারে।
এছাড়াও সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত রোগ পাউডারি মিলডিউ এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো এক প্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়ে। তাই পাওডারি মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস ডিএফ, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
ঘ) মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। অর্থাৎ আম গাছে ভরা মুকুলের সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর  অন্তর আম গাছের গোড়ায় ৪ বার সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
ঙ) আবার ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলেও আমের গুটি ঝরা কমে যায়। এছাড়াও প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড ¯স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
গাছে সার প্রয়োগঃ চারা রোপণের পর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছ প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো-
সারের নাম গাছের বয়স ( বছর )
১-৪ ৫-৭ ৮-১০ ১১-১৫ ১৬-২০ ২০ এর ঊর্দ্ধে
গোবর (কেজি) ২৬.২৫ ৩৫ ৪৩.৭৫ ৫২.৫০  ৭০ ৮৫.৫০
ইউরিয়া (গ্রাম) ৪৩৭.৫০ ৮৭৫ ১৩১২.৫০ ১৭৫০ ২৬২৫ ৩৫০০
টিএসপি (গ্রাম) ৪৩৭.৫০ ৪৩৭.৫০ ৮৭৫ ৮৭৫ ১২১২.৫০ ১৭৫০
এমওপি(গ্রাম) ১৭৫ ৩৫০ ৪৩৭.৫০ ৭০০ ৮৭৫ ১৪০০
জিপসাম(গ্রাম) ১৭৫ ৩৫০ ৪৩৭.৫০ ৬১২.৫০ ৭০০ ৮৭৫
জিংক সালফেট(গ্রাম) ১৭.৫০ ১৭.৫০ ২৬.২৫ ২৬.২৫ ৩৫ ৪৩.৭৫
বরিক এসিড(গ্রাম) ৩৫ ৩৫ ৫২.৫০ ৫২.৫০ ৭০ ৮৭.৫০
উৎসঃ কৃষি প্রযুক্তি হাতবই-২০১৭
প্রয়োগ পদ্ধতিঃ বয়স ভেদে নির্ধারিত সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ মার্চ মাসের মাঝামাঝী সময়ে যখন ফল মটর দানার মত হয় তখন এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার মে মাসের মাঝামাঝী সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, গাছের চারিদিকে গোড়া থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ মি. দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বেশি হলে এই দূরত্ব বাড়তে পারে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।

 source: কৃষি পোর্টাল


বিকৃতি / ম্যালফরমেশন রোগ

 

রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ/লক্ষণ:  ছত্রাকজনিত এ রোগের কারণে আক্রান্ত কান্ডের মাথায় অসংখ্য নতুন কুঁড়ি বের হয়, কুঁড়ি সমূহ শক্ত এবং ছোট ছোট পাতা বিশিষ্ট হয়। মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গাছ মারা যায়। রোগাক্রান্ত মুকুলে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা বের হয়, শাখা গুলো মোটা ও তুলনামুলকভাবে শক্ত হয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনা :
কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


এনথ্রাকনোজ 

 

এই রোগের আক্রমণে গাছের কচি পাতা, কাণ্ড, কুঁড়ি, মুকুল ও ফলে দেখা যায়। পাতায় অসমান আকৃতির ধূসর বাদামি বা কালচে রঙের দাগ পড়ে। পাশাপাশি কয়েকটি দাগ একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। বেশি আক্রান্ত হলে পাতা ঝরে পড়ে। আমের মুকুল বা ফুল আক্রান্ত হলে কালো দাগ দেখা দেয়। ফুল আক্রান্ত হলে তা মারা যায় এবং ঝরে পড়ে। মুকুল আক্রান্ত হলে ফলধারণ ব্যাহত হয়। আম ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে কালো দাগ দেখা দেয়। আক্রান্ত ছোট আম ঝরে পড়ে। বাড়ন্ত আমে রোগের জীবাণু আক্রমণ হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। পাকা আমে ধূসর বাদামি বা কালো দাগের সৃষ্টি করে। গুদামের আবহাওয়া অনুকূল হলে রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। আম বড় হওয়ার সময় ঘন ঘন বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করলে আমে আক্রমণ বেশি দেখা যায়।

প্রতিকার : রোগাক্রান্ত বা মরা ডালপালা ছাঁটাই করে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছের রোগাক্রান্ত ঝরা পাতা ও ঝরে পড়া আম সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, প্রয়োজনে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে। মুকুলে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করতে হলে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। মুকুল ১০-১৫ সেমি. লম্বা হলে প্রথম স্প্র্রে শেষ করতে হবে। আম মটর দানার মতো হলে দ্বিতীয় বার স্প্রে করতে হবে। কীটনাশকের এবং ছত্রাকনাশক মিশিয়ে একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বাড়ন্ত আমকে রোগমুক্ত রাখতে হলে আম সংগ্রহের ১৫ দিন আগ পর্যন্ত মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক বা একরোবেট এম জেড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে বা ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার স্প্রে করতে হবে।

গাছ থেকে আম পাড়ার পরপরই গরম পানিতে (৫৫০ সে. তাপমাত্রায় ৫ মিনিট) ডুবিয়ে রাখার পর শুকিয়ে অর্থাৎ গরম পানিতে শোধন করে গুদামজাত করতে হবে।


বোঁটা পচা রোগ

 আম গাছ থেকে পাড়ার পর পাকতে শুরু করলে বোঁটা পচা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমে বোঁটায় বাদামি অথবা কালো দাগ দেখা দেয়। দাগ দ্রুত বাড়তে থাকে এবং গোলাকার হয়ে বোঁটার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জীবাণু ফলের ভেতরে আক্রমণ করে পচিয়ে ফেলে। আক্রান্ত আম ২/৩ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। রোগের জীবাণু বোঁটা ছাড়াও অন্যান্য আঘাতপ্রাপ্ত স্থান দিয়ে আমের ভেতরে প্রবেশ করে আম পচিয়ে ফেলতে দেখা যায়।

প্রতিকার : রোদ্রোজ্জ্বল দিনে গাছ থেকে আম পাড়তে হবে। আম পাড়ার সময় যাতে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৫ সেমি. (২ ইঞ্চি) বোঁটাসহ আম পাড়লে এ রোগের আক্রমণ কমে যায়।  আম পাড়ার পর গাছের তলায় জমা না রেখে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। আম পাড়ার পর পরই গরম পানিতে (৫৫০ সে. তাপমাত্রার পানিতে ৫-৭ মিনিট) অথবা বাভিস্টিন দ্রবণে (প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম) ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখার পর গুদামজাত করলে বোঁটা পচা রোগের আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।


আমের আঠা ঝরা রোগ

 

বর্তমানে আম গাছের  যেসব রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এ রোগে আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । প্রথমে কা- অথবা মোটা ডালের কিছু কিছু জায়গা থেকে হালকা বাদামি থেকে গাড় বাদামি রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে। বেশি আক্রান্ত ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একইভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার : গাছে মরা বা ঘন ডাল পালা থাকলে তা নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে। আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের আক্রান্ত সহ সুস্থ কিছু অংশ তুলে ফেলে সেখানে বোর্দোপেস্টের (১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে। আক্রান্ত ডাল কিছু সুস্থ অংশসহ কেটে পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বোর্দোপেস্টের  প্রলেপ দিতে হবে। গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ১৫ দিনের ব্যবধানে ২ বার স্প্রে করতে হবে।


আগামরা রোগ

 

এ রোগের জীবাণু প্রথমে কচি পাতায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত পাতা বাদামি হয় এবং পাতার কিনারা মুড়িয়ে যায়। পাতাটি তাড়াতাড়ি মারা যায় ও শুকিয়ে যায়। আক্রমণ পাতা থেকে এ রোগের জীবাণু কুড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ডগার সামনের দিকে মরে যায়। মরা অংশ নিচের দিকে অগ্রসর হতে থাকে ফলে বহু দূর থেকে আগামরা রোগের লক্ষণ বোঝা যায়। ডগাটি লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামি লম্বা দাগের সৃষ্টি করে। আক্রমণ বেশি হলে গাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার : আক্রান্ত ডাল কিছু সুস্থ অংশসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা অংশ পুড়াই ফেললে ভালো। কাটা অংশে বোর্দোপেস্টের (১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে। গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ ইন্ডোফিল ইত্যাদি (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) ১৫ দিনের ব্যবধানে ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।


কাল প্রান্ত

 

ইটের ভাটা থেকে নির্গত ধোয়ায় কারণে এ রোগ হতে পারে। আমের বয়স দেড় মাস হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আক্রান্ত আমের বোঁটার দিকের অংশ স্বাভাবিকভাবে বাড়লেও নিচের অংশ ঠিক মতো বাড়তে পারে না।  ফলে আমের গঠন বিকৃত হয়। নিচের অংশ কুঁচকে যায়, বেশি আক্রান্ত আমের নিচের অংশ কাল হয়ে যায়। কোনো কোনো সময় আমের বিকৃত অংশ ফেটে যেতে পারে এবং পচে যেতে পারে।
প্রতিকার : আম মার্বেল আকারের হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম বোরাক্স বা বোরিক পাউডার ১০-১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।  ইটের ভাটা আম বাগান থেকে ২ কিমি. দূরে স্থাপন করতে হবে। ইটের ভাটার চিমনি কমপক্ষে ৩৭ মিটার (১২০ ফুট) উঁচু করতে হবে।



আম ফেটে যাওয়া রোগ

 

আম ছাড়াও কাঁঠাল, ডালিম, পেয়ারা ইত্যাদি ফল ফেটে যেতে দেখা যায়। সব ধরনের ফল ফাটার কারণ মোটামুটিভাবে একই। মাটিতে রসের দ্রুত হ্রাস-বৃদ্ধি আম ফাটার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। আবহাওয়া শুকনা হলে এবং দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হলে আমের ওপরের খোসা শক্ত হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ বৃষ্টিপাত হলে বা সেচ প্রদান করলে আম দ্রুত বাড়তে শুরু করে। আমের ভেতরের দিক ঠিকমতো বাড়লেও বাহিরের আবরণ শক্ত হওয়ার কারণে তা বাড়তে পারে না। এ অবস্থায় আম ফেটে যায়। মাটিতে বোরণের ঘাটতি থাকলেও আম ফাটতে সহায়তা করে বলে জানা যায়। প্রতিকার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার দিতে হবে। জৈব সার মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে ফলে শুকনা বা খরার সময়ও মাটিতে যথেষ্ট রস থাকবে। জৈব সারের মধ্যে গোবর সব চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত। সার দেয়ার মৌসুমে ২০ বছর বা তদূর্ধ্ববয়সের গাছে ৫০ গ্রাম বোরাক্স বা বোরিক এসিড প্রয়োগ করতে হবে।


চীনাবাদামের ক্ষতিকারক পোকা মাকড় দমন

পিপিলিকা

জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিঁলিকা আক্রমন করে রোপিত বাদামের দানা সব খেয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপিঁলিকা দমন করা যায়।



উইপোকা


উইপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের শিকড় আক্রমণ করে। এরা শিকড় ও কাণ্ডের ভেতর গর্ত করে ভেতরের নরম অংশ খায়, ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা পডের ভেতর ছিদ্র করে ও তাতে বীজ নষ্ট হয়ে যায় এবং ভেতরে অনেক সময় ছাইয়ের মতো হয়। অনেক সময় তারা পডের ওপর নরম টিস্যু খেয়ে ফেলে, এজন্য বাদামের পডকে জালিকা আকার দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা :

১. প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ১ চা-চামচ কেরোসিন বা নিম তেল ভালোভাবে মিশিয়ে বপন করলে উইপোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. উইপোকার বাসা নষ্ট করে এ পোকা দমন করা যায়।

৩. আক্রান্ত জমিতে পানির সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে। পাইরিফস ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৪. আক্রমণ খুব বেশি হলে ফুরাডান ৫জি প্রতি হেক্টরে ১৮ কেজি হিসেবে প্রয়োগ করলে এ পোকা দমন করা যায়।


বিছা পোকা


বাদাম ফসলে বিছা পোকা মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। বিছা পোকার স্ত্রী মথ দেখতে হালকা হলদে বাদামি রংয়ের এবং তাদের পাখায় কালো ফোঁটা থাকে। এদের লার্ভা বা কীড়া হালকা হলুদ বর্ণের এবং প্রায় ১-১.৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। মাথার সামান্য অংশ কালো থাকে। স্ত্রী মথ সাধারণত পাতার নিচের দিকে ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে কীড়াগুলো পাতা খেয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। এরা শুধু পাতাই খায় না বরং কাণ্ড ও ফুল খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে।

দমন ব্যবস্থা :

১. মথ আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়; তাই আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করলে এ পোকা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়।

৩. হাত দ্বারা এ পোকা ধ্বংস করা যায়। ক্ষেতের মাঝে মাঝে খুঁটি পুঁতে দিলে পাখি কীড়াগুলো ধরে খায়।

৪. নিমের রস ১৫ ভাগ স্প্রে করলেও এ পোকা দমন করা যায়। ৫. প্রচণ্ড আক্রমণের সময় সিমবুশ ১০ ইসি, পারফেকথিয়ন ৪০ ইসি, ২ মিলি ১ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা যায়।


চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকা

এই পোকার কীড়া পাতার ভিতরে অবস্থান করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অধিক আক্রামত গাছ পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়।

পাতা মোড়ানো পোকা

এই পোকার কীড়া চিনাবাদামের ছোট পাতাগুলোকে মুড়িয়ে ভিতরে বসে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। পাতা সাদা হয়ে যায়।


জ্যাসিড বা পাতা হপার

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পূর্নাঙ্গ পোকা গাছের পাতার রস শোষণ করে। প্রথমে পাতার কিনারা হলুদ তামাটে পরে লালচে রং ধারণ করে। এ পোকা ভাইরাস রোগের বাহক হিসাবেও কাজ করে।

চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিছা পোকা ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থা

এ জাতটির জ্যাসিড ও বিছা পোকার আক্রমন সহ্য ক্ষমতা বেশি।

আলোর ফাঁদ পেতে।

আক্রামত ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পতঙ্গভুক পাখী বসার ব্যবস্থা করে।

পরজীবি পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জাব ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর ক্ষেত্রে পরজীবি ও পরভোজী উভয় ধরণের পোকার বংশ বৃদ্ধি করে।

বিছা পোকার ক্ষেত্রে আক্রমনের প্রথম অবস্থায় পাতার নীচে দলবদ্ধ বিছাগুলোকে হাত দিয়ে সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে অথবা কোন কিছু দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।

১০ লিটার পানির সাথে ২০ মি.লি. ক্লাসিক ২০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকার ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. রিপকার্ড ১০ ইসি মিশিয়ে প্রযোগ করা যেতে পারে। অথবা সাইথ্রিন ১০ ইসি একই মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।

চিনাবাদামের জ্যাসিড বা পাতা হপারের ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ১১ মি.লি. সিমবুশ ১০ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকা


বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক জাব পোকা পাতার উল্টো দিক থেকে রস শোষণ করে থাকে। আক্রমনের ফলে পাতা কিছুটা কুকড়ে যায়।

চিনাবাদামের জাব পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থা

পরজীবি ও পরভোজী পোকার বংশ বৃদ্ধি করে।

১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. সাইথ্রিন ১০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ লিটার পানিতে ২০ মি.লি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

চীনাবাদামের রোগ ব্যবস্থাপনা

চীনাবাদামের এনথ্রাকনোজ রোগ

লক্ষণঃ
১। ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
২। এতে পাতায় গোলাকার হলুদ কিনারা যুক্ত দাগ দেখা যায়, যা ক্রমেই বড় হয়ে সমগ্র পাতা ও কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা ।
২। এ রোগ দেখা দিয়ে ক্যালিক্সিন ১মিলি বা টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
সাবধানতাঃ
১। ক্ষেতের আশ পাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
করনীয়ঃ
১। রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা , নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন।
২। ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।


চীনাবাদামের টিক্কা রোগ

লক্ষণঃ
১। এ রোগের করণে পাতার উপরে হলদে রেখা বেষ্টিত বাদামী রংয়ের গালাকার দাগ সৃষ্টি হয় ।
২। দাগগুলো ক্রমেই বড় হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে দাগগুলো গাঢ় বাদামী হতে হালচে বর্ণের হয় ।
৩। ধীরে ধীরে পাতা ঝরে যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা ।
২। রোগ সহনশীল জাতের চাষ করা ।
৩। ফসল কাটার পর আগাছা পুড়ে ফেলা ।
৪। রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/নোইন বা ২গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর ২-৩ বার স্প্রে করা ।
সাবধানতাঃ
১। ক্ষেতের আশ পাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
করনীয়ঃ
১। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন। ২। ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলুন।


চীনাবাদামের পাতার মরিচা রোগ -Leaf Rust of Groundnut (Puccinia arachidis) ছত্রাকজনিত রোগ।


লক্ষণঃ

  • বয়স্ক গাছেই এ রোগের আক্রমণ বেশী হয়।
  • পাতার নিচের দিকে প্রথমে মরিচা পড়ার ন্যায় সামন্য উঁচু বিন্দুর মত দাগ দেখা যায়।
  • দাগ ধীরে ধীরে বড় হয়।
  • আক্রমণ বেশী হলে পাতার উপরের পিঠে এ রোগ দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।
  • আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা।
  • ফসল কাটার পর পরিত্যক্ত গাছ, আগাছা বা নাড়া পুড়ে ফেলা।
  • এ রোগ দেখা দিলে ক্যালিক্সিন ১ মিলি বা টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • বাদামের মরিচা রোগ প্রতিরোধের জন্য অটোস্টিন ১ গ্রাম অথবা কন্টাফ ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার স্প্রে করা।
চীনাবাদামের নেতিয়ে পড়া রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • ছোট গাছ হঠাৎ মরে যেতে দেখা যায়।
  • অনেক সময় পাতা সবুজ থাকে।
  • বড় গাছের ক্ষেত্রে পাতাগুলো আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ অপসারণ করুন ।
  • অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে কুপ্রভিট ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
  • নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন।
  • ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলুন।
  • কয়েকবার দানাদার ফসলের চাষ করে পরবর্তীতে চীনাবাদাম চাষ করুন।

চীনাবাদামের গোড়া পচা রোগ -Foot Rot of Groundnut (Sclerotium rolfsii) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • গাছের বৃদ্ধির যে কোন অবস্থায় এ রোগ দেখা দিতে পারে। সাধারণত গাছের যে সকল অংশ মাটির কাছাকাছি বা নিচে থাকে সে অংশসমূহ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
  • আক্রান্ত অংশে গাঢ় বাদামী হতে কালো দাগের সৃষ্টি হয়।
  • আক্রান্ত গাছের গোড়ায় বা মাটিতে ছত্রাকের সাদা মাইসেলিয়াম এবং সরিষার দানার মত ছত্রাক গুটিকা (স্কেলেরোশিয়া) লক্ষ্য করা যায়।
  • এ রোগের কারণে গাছের প্রধান শিকড় আক্রান্ত হলে গাছ সম্পূর্ণ ঢরে পড়ে এবং পরবর্তীতে খাদ্য ও পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে গাছ মরে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন/হেক্টর বা সরিষার খৈল ১ টন/হেক্টর হারে জমিতে প্রয়োগ করা।
  • প্রোভেক্স ২০০ ছাত্রক নাশক (২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করে নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বপন করা।
  • এছাড়াও বীজ বপনের পূর্বে প্রোভেক্স (২.০ গ্রাম/লিটার) মাটিতে প্রওয়োগ সহ বীজ তলায় বীজ বপন করা।

 Source: কৃষি বাতায়ন

সরিষার পোকা মাকড় দমন

সরিষার জাব পোকা 

লক্ষণ: পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা উভয়ই সরিষার পাতা, কান্ড, ফুল ও ফল হতে রস শোষণ করে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ফুল ও ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়। জাব পোকা এক ধরনের রস নিঃসরণ করে, ফলে তাতে সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং আক্রান্ত অংশ কালো দেখায়। এজন্য ফল ঠিকমত বাড়তে পারে না, বীজ আকারে ছোট হয়। বীজে তেলের পরিমাণ কমে যায়। ফল ধারণ অবস্থায় বা তার আগে আক্রমণ হলে এবং প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।

প্রতিকার:
১. আগাম চাষ আশ্বিনের শেষ ভাগ ও মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর) অর্থাৎ আগাম সরিষা বপন করলে জাব পোকার আক্রমণের আশংকা কম থাকে।

২. প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকা থাকলে ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি বা সুমিথিয়ন-৫৭ ইসি বা ফলিথিয়ন-৫৭ ইসি বা একোথিয়ন-৫৭ ইসি ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকালে সেপ্র করতে হবে।


 সরিষার ফ্লি বিটল পোকা

পোকা চেনার উপায় : ছোট কালো রঙের পোকা।
ক্ষতির ধরণ : পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খায় । আক্রান্ত পাতায় অসংখ্য ছিদ্র হয়।
আক্রমণের পর্যায় : বাড়ন্ত পর্যায়, চারা
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা , কচি পাতা
পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করে : পূর্ণ বয়স্ক
ব্যবস্থাপনা :
সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 সরিষার কাটুই পোকা

পোকা চেনার উপায় : মথ মাঝারি আকারের ধুসর রঙের কালসে ছোপ ছোপ ডোরাকাটা। পাখায় হালকা ঝালরের মতো সুক্ষ পশম থাকে। পীঠ বরাবর লম্বা লম্বি হালকা ধূসর /কালো চওড়া রেখা আছে। পুত্তলি গাঢ় বাদামি কাটার মতো অঙ্গ থাকে।
ক্ষতির ধরণ : রাতের বেলা মাটি বরাবর চারার গোড়া কেটে দেয়। সকাল বেলা চারা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ।
আক্রমণের পর্যায় : চারা
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : গোঁড়া
পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করে : কীড়া
ব্যবস্থাপনা :
আক্রমণ বেশি হলে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ( কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি / ৪ মূখ ) অথবা ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ( ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি / ৩ মূখ ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।


Source: Internet

সরিষার রোগ ব্যবস্থাপনা

১. পাতা ঝলসানো রোগ (Alternaria blight)
রোগের কারণ, উৎপত্তি ও বিস্তার : Alternaria brassicae এবং Alternaria brassiaicola নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয় এবং বীজ বিকল্প পোষক ও বায়ুর মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৭% এর অধিক এবং তাপমাত্রা ১২-২৫ ডিগ্রি সে. ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়।

রোগের লক্ষণ
১. এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সরিষা গাছের নিচের বয়স্ক পাতায় ছোট, বাদামি গোলাকার দাগ আকারে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে এ দাগ আকারে বড় হতে থাকে।
২. পরবর্তীতে গাছের পাতা, শুটি, কাণ্ড ও ফলে গোলাকার গাঢ় বাদামি বা কালো দাগের সৃষ্টি হয়। দাগগুলো ধূসর, গোলাকার সীমা রেখা দ্বারা আবদ্ধ থাকে। অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয় বড় দাগের সৃষ্টি করে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ঝলসে যায়।
৩. আক্রান্ত শুঁটি থেকে পাওয়া বীজ ছোট, বিবর্ণ এবং কুঁচকে যায় এবং ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

রোগের প্রতিকার
১. রোগ সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে। তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত দৌলত, বারি সরিষা ১০, বারি সরিষা ১১ ইত্যাদি জাতগুলো এ রোগ সহনশীল।
২. সঠিক সময়ে বীজ বপন করতে হবে অর্থাৎ অক্টোবরে  শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
৩. সুস্থ সবল  জীবাণু মুক্ত এবং প্রত্যয়িত বীজ বপন করতে হবে।
৪. সরিষার মাঠে সময়মতো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে বিশেষ করে বথুয়া পরিষ্কার করতে হবে।
৫. অনুমোদিত মাত্রায় পটাশ সার ব্যবহার করলে পাতা ঝলসানো রোগের আক্রমণ কম হয়। জমিতে পূর্ববর্তী ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং ফসল কর্তনের পর আক্রান্ত গাছের পাতা জমি থেকে সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৬. প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম হারে প্রভে´ ২০০ ডব্লিউ পি দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে।
৭. ১০০ গ্রাম নিমপাতায় সামান্য পানি দিয়ে পিষিয়ে তার রস ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে ১০ দিন অন্তর ৩ বার গাছে প্রয়োগ করলে রোগের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায়।
৮. এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডব্লিউপি শতকরা ০.২ ভাগ হারে (প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক) পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ৩ বার পুরো গাছে ছিটিয়ে স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ থেকে ফসলকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব।


২. ডাউনি মিলডিউ রোগ (Downey mildew)
রোগের কারণ, উৎপত্তি ও বিস্তার : Peronospora parasitica নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। এ ছত্রাক গাছের আক্রান্ত অংশে এবং বিকল্প পোষক ও স্পোর হিসেবে বেঁচে থাকে। ঠাণ্ডা (তাপমাত্রা ১০-২০ ডিগ্রি সে.) এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় (৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা) এ রোগ সহজে বিস্তার লাভ করে। এছাড়া গাছের সংখ্যা বেশি হলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

রোগের লক্ষণ
১. গাছের চারা অবস্থার পর থেকে যেকোনো সময় এ রোগে গাছ আক্রান্ত হতে পারে।
২. আক্রান্ত পাতার নিম্নপৃষ্ঠে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখা যায় এবং পাতার উপরের পৃষ্ঠ হলদে হয়ে যায়।
৩. অনুকূল আবহাওয়ায় এ ছত্রাকের বংশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়; ফলে পাতা আকারে ছোট হয়ে যায়।
৪. এ রোগ পরবর্তীতে সরিষার শুঁটি আক্রমণ করে এবং বীজ হতে খাদ্য গ্রহণ করার ফলে উৎপাদন বহুলাংশে কমে যায়।
রোগের প্রতিকার
১. সুস্থ সবল ও জীবাণু মুক্ত বীজ বপণ করতে হবে।
২. ন্যাপাস জাতীয় সরিষা এ রোগ সহনশীল।
৩. সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার এবং সেচের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. শস্য পর্যায়ক্রম করতে হবে।
৫. ফসল কর্তনের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৬. বীজ বপনের আগে বীজ শোধন (প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউ পি ২.৫ গ্রাম বা ব্যাভিস্টিন ২ গ্রাম/ কেজি বীজ) করে লাগাতে হবে।
৭. রোগ দেখা দেয়া মাত্র রিডোমিল এম জেড-৭২ বা ডাইথেন এম-৪৫ শতকরা ০.২ ভাগ হারে (প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম ছত্রাশনাশক) ১০ দিন অন্তর ৩ বার পুরো গাছে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে ফসলকে এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।


৩. স্ক্লেরোসিনিয়া কাণ্ড পচা রোাগ (Sclerotinia stem rot)
রোগের কারণ, উৎপত্তি ও বিস্তার : Sclerotinia sclerotiorum নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। এই ছত্রাক মৃত অথবা জীবন্ত উদ্ভিদে সাদা মাইসেলিয়া তৈরি করে এবং উদ্ভিদের আক্রান্ত অংশে এবং মাটিতে কালো দানার মতো স্ক্লেরোসিয়া তৈরি করে বেঁচে থাকে। এ ছাড়া আক্রান্ত বীজের মাধ্যমেও এরা বিস্তার লাভ করে থাকে। সাধারণত আর্দ্রতা অধিক (৯০-৯৫%) এবং ১৮-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় বায়ু প্রবাহের ফলে এ রোগের প্রাদুর্ভব বেশি হয়।

রোগের লক্ষণ
১. প্রাথমিক অবস্থায় সরিষার গাছের কাণ্ডে পানি ভেজা দাগ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় যা পরবর্তীতে তুলার মতো সাদা মাইসেলিয়া সৃষ্টি করে।
২. আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে আক্রান্ত কাণ্ড বিবর্ণ হয়ে যায় এবং টিস্যু মারা যায়।
৩. সরিষা গাছে অকাল পক্বতা পরিলক্ষিত হয় এবং গাছ হেলে পড়ে, শুকিয়ে যায় ও মারা যায় এবং ফলন মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়।
৪. কাণ্ডের মধ্যে শক্ত কালো স্ক্লেরোসিয়া সৃষ্টি হয় এ স্ক্লেরোসিয়া অনেক সময় কাণ্ডের ওপরে দেখতে পাওয়া যায়।
রোগের প্রতিকার
১. সুস্থ সবল রোগমুক্ত প্রত্যয়িত বীজ বপন করতে হবে।
২. গ্রীষ্ম মৌসুমে গভীরভাবে জমি চাষ দিতে হবে।
৩. জমিতে আক্রান্ত ফসলের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. এ রোগের পোষক নয় এমন ফসল দ্বারা শস্য পর্যায়ক্রম করতে হবে যেমন- গম, যব, ধান এবং ভুট্টা।
৫. জমিতে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি অথবা ট্রাইকোডারমা হারজেনিয়াম প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৫ কেজি হারে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৬. কারবেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ০.১ ভাগ হারে (প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম ছত্রাকনাশক) ফুল আসার সময় ২০ দিন অন্তর ২ বার পুরো গাছে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।


৪. সপুষ্পক পরজীবী উদ্ভিদ 
(Orobanche প্রজাতি) রোগের কারণ, উৎপত্তি ও বিস্তার : Orobanche Spp. নামক এক প্রকার সপুষ্পক শিকড়-পরজীবী উদ্ভিদ যার বংশ বৃদ্ধি সরিষার ওপর নির্ভরশীল। মাটি, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, সেচের পানি প্রভৃতির মাধ্যমে রোগের বিস্তার লাভ করে। প্রতি বছর একই জমিতে সরিষা পরিবারের কোনো ফসলের চাষ করলে এ পরজীবী উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণ
১. অরোবাংকি এক প্রকার সপুষ্পক শিকড়-পরজীবী উদ্ভিদ যার বংশ বৃদ্ধি সরিষার ওপর নির্ভরশীল।
২. এর বীজ মাটিতেই অবস্থান করে।
৩. সরিষা গাছের শিকড়ের সাথে এ পরজীবী উদ্ভিদ সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
৪. ফলে আক্রান্ত সরিষার গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়।
রোগের প্রতিকার
১. একই জমিতে প্রতি বছর সরিষা চাষ না করে অন্যান্য ফসল যেমন- ধান, গম জাতীয় ফসল (যাতে অরোবাংকি না হয়) পর্যায়ক্রমে চাষ করলে এ রোগের প্রাদুর্ভার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
২. ফল আসার আগেই এ পরজীবী উদ্ভিদ জমি হতে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
৩. বীজ বপনের পূর্বে জমি লাঙল দিয়ে গভীরভাবে চাষ করতে হবে। এতে পরজীবী উদ্ভিদের বীজ মাটির গভীরে চলে যায় এবং সরিষার শিকড়ের সংস্পর্শে না আসায় বীজ গজাতে পারে না।
৪. টিএসপি ২৫০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগের মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়।
৫. জমিতে ২৫% কপার সালফেট দ্রবণ স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।



Source: AIS
*বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী, পাবনা
মো. রাজিব হুমায়ুন*