কলার রোগ ও তার প্রতিকার

কলার পানামা রোগ (Panama Disease of Banana)

Fusarium oxysporum  নামক ছত্রাকের কারণে করার পানামা রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণঃ
    ১) এ রোগে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে।
    ২) পরে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে ও গাছ মারা যায়।
    ৩) কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটেও যায় এবং ভিতরের ভাস্কুলার বান্ডেল হলদে বাদামি বর্ণ ধারণ করে।

প্রতিকারঃ
    ১) আক্রান্ত গাছ গোড়া থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
    ২) রোগমুক্ত গাছ থাকে চারা রোপণ করতে হবে
    ৩) আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ না করা।
    ৪) ব্যাপক হারে কলাগাছ আক্রান্ত হলে কমপক্ষে ২ বছর ঐ জমিতে কলা চাষ করা বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
    ৫) চুন প্রয়োগ করে মাটির পি-এইচ (PH) বৃদ্বি করতে হবে। অথবা কলার চারা লাগানোর ১৫ দিন পূর্বে প্রতি গর্তে ২০০-৩০০ গ্রাম ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
    ৬) চারা লাগানোর পুর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া এবং ১০-১২ দিন পর চারা রোপণ করা।
    ৭) চারা রোপণের ১ মাস পরে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের চারিদিকে প্রতি মাসে একবার করে প্রয়োগ করতে হবে।

করার গুচ্ছমাথা রোগ (Bunchy Top Disease of Banana)

 


এটি ভাইরাসজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

    ১) এ রোগের কারণে কলা গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়।
    ২) পাতা আকারে খাটো, অপ্রস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে।
    ৩) কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাকানো এবং হলুদ রংয়ের হয়। পাতার শিরার মধ্যে ঘন সবুজ দাগ পড়ে।
প্রতিকারঃ
    ১) আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলা।
    ২) সুস্থ সবল চারা রোপণ করা।
    ৩) ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকা ও থ্রিপস) দমনের জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক ইমিডাক্লোরপ্রিড ( এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার, বাম্পার, এমপায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে বা অনুমোদিত মাত্রানুযায়ী স্প্রে করতে হবে।

কলার সিগাটোকা রোগ (Sigatoka Disease of Banana)

 

কলা গাছে পাতায় দাগ বা সিগাটোকা (Leaf spot or Sigatoka) রোগটি সারকোস্পোরা মুসি (Cercospora musae) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণ:

    ১) এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল গাছের তৃতীয় ও চতুর্থ কচি পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ পড়ে।
    ২) দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় ও বাদামী ঝলসানো রঙ ধারণ করে।
   ৩) বেশি আক্রান্ত পাতা আগুনে ঝলসানো বা পোড়া মনে হয়। আক্রান্ত গাছের ফলন ১০-১৫% কম হয়।
    ৪) তীব্র আক্রমণে অনেক পাতা সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার:

   ১) রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে।
    ২) পাতলা করে গাছ লাগাতে হবে।
   ৩) আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে রোগের তীব্রতা কমানো যায়।
    ৪) ২-৩ মাস পর পর গাছের নীচের দিকের পাতাগূলো সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
   ৫) জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
    ৬) রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে গাছে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

 Source: Internet

Related Posts

0 Comments: