চীনাবাদামের ক্ষতিকারক পোকা মাকড় দমন

পিপিলিকা

জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিঁলিকা আক্রমন করে রোপিত বাদামের দানা সব খেয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপিঁলিকা দমন করা যায়।



উইপোকা


উইপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের শিকড় আক্রমণ করে। এরা শিকড় ও কাণ্ডের ভেতর গর্ত করে ভেতরের নরম অংশ খায়, ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা পডের ভেতর ছিদ্র করে ও তাতে বীজ নষ্ট হয়ে যায় এবং ভেতরে অনেক সময় ছাইয়ের মতো হয়। অনেক সময় তারা পডের ওপর নরম টিস্যু খেয়ে ফেলে, এজন্য বাদামের পডকে জালিকা আকার দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা :

১. প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ১ চা-চামচ কেরোসিন বা নিম তেল ভালোভাবে মিশিয়ে বপন করলে উইপোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. উইপোকার বাসা নষ্ট করে এ পোকা দমন করা যায়।

৩. আক্রান্ত জমিতে পানির সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে। পাইরিফস ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৪. আক্রমণ খুব বেশি হলে ফুরাডান ৫জি প্রতি হেক্টরে ১৮ কেজি হিসেবে প্রয়োগ করলে এ পোকা দমন করা যায়।


বিছা পোকা


বাদাম ফসলে বিছা পোকা মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। বিছা পোকার স্ত্রী মথ দেখতে হালকা হলদে বাদামি রংয়ের এবং তাদের পাখায় কালো ফোঁটা থাকে। এদের লার্ভা বা কীড়া হালকা হলুদ বর্ণের এবং প্রায় ১-১.৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। মাথার সামান্য অংশ কালো থাকে। স্ত্রী মথ সাধারণত পাতার নিচের দিকে ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে কীড়াগুলো পাতা খেয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। এরা শুধু পাতাই খায় না বরং কাণ্ড ও ফুল খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে।

দমন ব্যবস্থা :

১. মথ আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়; তাই আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করলে এ পোকা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়।

৩. হাত দ্বারা এ পোকা ধ্বংস করা যায়। ক্ষেতের মাঝে মাঝে খুঁটি পুঁতে দিলে পাখি কীড়াগুলো ধরে খায়।

৪. নিমের রস ১৫ ভাগ স্প্রে করলেও এ পোকা দমন করা যায়। ৫. প্রচণ্ড আক্রমণের সময় সিমবুশ ১০ ইসি, পারফেকথিয়ন ৪০ ইসি, ২ মিলি ১ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা যায়।


চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকা

এই পোকার কীড়া পাতার ভিতরে অবস্থান করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অধিক আক্রামত গাছ পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়।

পাতা মোড়ানো পোকা

এই পোকার কীড়া চিনাবাদামের ছোট পাতাগুলোকে মুড়িয়ে ভিতরে বসে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। পাতা সাদা হয়ে যায়।


জ্যাসিড বা পাতা হপার

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পূর্নাঙ্গ পোকা গাছের পাতার রস শোষণ করে। প্রথমে পাতার কিনারা হলুদ তামাটে পরে লালচে রং ধারণ করে। এ পোকা ভাইরাস রোগের বাহক হিসাবেও কাজ করে।

চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিছা পোকা ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থা

এ জাতটির জ্যাসিড ও বিছা পোকার আক্রমন সহ্য ক্ষমতা বেশি।

আলোর ফাঁদ পেতে।

আক্রামত ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পতঙ্গভুক পাখী বসার ব্যবস্থা করে।

পরজীবি পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জাব ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর ক্ষেত্রে পরজীবি ও পরভোজী উভয় ধরণের পোকার বংশ বৃদ্ধি করে।

বিছা পোকার ক্ষেত্রে আক্রমনের প্রথম অবস্থায় পাতার নীচে দলবদ্ধ বিছাগুলোকে হাত দিয়ে সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে অথবা কোন কিছু দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।

১০ লিটার পানির সাথে ২০ মি.লি. ক্লাসিক ২০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকার ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. রিপকার্ড ১০ ইসি মিশিয়ে প্রযোগ করা যেতে পারে। অথবা সাইথ্রিন ১০ ইসি একই মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।

চিনাবাদামের জ্যাসিড বা পাতা হপারের ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ১১ মি.লি. সিমবুশ ১০ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকা


বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক জাব পোকা পাতার উল্টো দিক থেকে রস শোষণ করে থাকে। আক্রমনের ফলে পাতা কিছুটা কুকড়ে যায়।

চিনাবাদামের জাব পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থা

পরজীবি ও পরভোজী পোকার বংশ বৃদ্ধি করে।

১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. সাইথ্রিন ১০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ লিটার পানিতে ২০ মি.লি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

Related Posts

0 Comments: