কলার পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনা

কলার ছাতরা পোকা

ক্ষতির প্রকৃতি ও লক্ষণ
এ পোকা আক্রান্ত গাছের বাড়ন্ত ডগা এবং মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে কচি ডগা ও মুকুল শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারন বিঘœ সৃষ্টি করে। ফল ধারণ করলেও খুবই দুর্বল হয়, সামান্য বাতাসেই কচি ফল ঝড়ে পড়ে। সাধারণত এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং ডগা ও মুকুলের বোঁটায় এমনভাবে গাদাগাদি করে থাকে যে আক্রান্ত ডগাটিই আর দেখতে পাওয়া যায় না। আক্রমণ মারাত্মক হলে এদের নিঃসৃত মধুরসে শু্যঁটিমোল্ড রোগ হয় ফলে পাতা কালো হয়ে যায় বলে ঠিকমতো খাদ্য তৈরি হয় না এবং আক্রান্ত গাছ অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির হয় এবং গাছে ফলন অত্যন্ত কমে যায়।

এ ধরনের ছাতরা পোকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক নিম্ফ বেশ কয়েকটি পরজীবী পোকা দ্বারা আক্রান্ত  হতে পারে। এদের মধ্যে Phygadeuon sp. (Ichneuminidae), Getonides perspicax Knal Ges Rodolia fumida এর কীড়া অন্যতম। পরজীবী পোকার ব্যাপক আক্রমণের ফলে প্রতি বছর এর আক্রমণের হার কমবেশি হতে দেখা যায়। এমনকি এক বছর এর ব্যাপক আক্রমণ পরিলক্ষিত হলেও পরবর্তী বছর কোনো ধরনের আক্রমণ নাও হতে পারে।  

দমন ব্যবস্থাপনা
১.  বাগানে জন্মানো আগাছা ও অন্যান্য পোষক উদ্ভিদ তুলে বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২. গ্রীষ্মকালে (বিশেষত সেপ্টেম্বর-অক্টেবর মাসে)  বাগান ভালো করে চাষ দিতে হবে বা পূর্ববর্তী বছরে আক্রান্ত গাছসমূহের গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে আলগা ও এপিঠ-ওপিঠ করে দিতে হবে যাতে মাটির নিচে থাকা ডিম উপরে উঠে আসে এবং পাখি ও অন্যান্য শিকারী পোকার কাছে তা উন্মুক্ত হয়, তাছাড়া রোদে পোকার ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

৩. যেহেতু নিম্ফগুলো গাছ বেয়ে ওপরে উঠে তাই নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ৮-১০ ইঞ্চি চওড়া প্লাস্টিকের পিচ্ছিল  ব্যান্ড গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা বার বার ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করে পরিশ্রান্ত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ডের নিচের অংশে নিম্ফগুলো জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর কীটনাশক ¯েপ্র করে দমন করা যায়। এসময় নিম্ফগুলোকে গাছে উঠা হতে নিবৃত করতে পারলে এ পোকার আক্রমণ পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব।

৪. যদি কোনো কারণে নিম্ফগুলো গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায় তবে শুধুমাত্র গাছের আক্রান্ত অংশে (Spot application) সংস্পর্শ ও পাকস্থলী (Contact and stomach) কীটনাশক বিধি মোতাবেক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে অল্প কিছু পরিমাণ নিম্ফ গাছ বেয়ে উপরে উঠে গেলে কেবলমাত্র গুঁড়া সাবান মিশ্রিত পানি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে) স্প্রে করে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। তবে ব্যাপকভাবে আক্রমণের ক্ষেত্রে কীটনাশক প্রয়োগের বিকল্প নেই। যেহেতু এ পোকাটির বহিরাবরণ ওয়াক্সি পাউডার জাতীয় পদার্থ দিয়ে সুরক্ষিত থাকে সেহেতু পরীক্ষিত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন করা দুরূহ।  এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি. হারে) এবং তার ৩-৪ দিন পর কার্বারাইল (সেভিন ৮৫ এসপি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) আক্রান্ত অংশে ¯েপ্র করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব।

কলার বিটল পোকা

 

আক্রমণে ক্ষতির লক্ষণ
১। বিটল পোকার কীড়া এবং পূর্ণ বয়স্ক পোকা উভয়ই কলাগাছের ক্ষতি করে।
২। এই পোকার আক্রমণে পূর্ণবয়স্ক পোকা প্রথমে কলা গাছের কচি হলুদ পাতা কুরে কুরে খায়। যার ফলে কলা গাছের কচি পাতাতে কালো দাগ পড়ে।
৩। এছাড়াও পরবর্তীতে কলা গাছের পাতা বড় হলে দাগও বড় হয়। ফলে পোকা আক্রান্ত গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।
৪। পূর্ণাঙ্গ বিটল পোকা কচি কলার সবুজ অংশ চেঁছে খেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ তৈরি করে।
৫। কলা বড় হওয়ার সাথে সাথে উক্ত তৈরি করা দাগগুলি আকারে বড় হয়। পরবর্তীতে এই দাগ কালচে বাদামী রঙ ধারণ করে।
৬। আক্রান্ত গাছের দাগযুক্ত কলা বসন্ত রোগের মত দেখায়।
৭। বিটল পোকার আক্রমণ বেশি হলে আক্রান্ত ফল আকারে ছোট মনে হয় এবং ফলন কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১। প্রয়োজনে মুড়ি ফসল চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কলার বাগান সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছের মরা পাতা এবং অন্যান্য আগাছা একত্র করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। কলা বাগানে আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন করতে হবে।
৪ কলা বাগানে আলোর ফাঁদ স্থাপন করতে হবে।
৫। কলার মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে দুই মুখ খোলা ছিদ্র বিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে কলার মোচা ঢেকে দিতে হবে।
৬। এরপর কলার কাদি সম্পূর্ণ বের হবার এক মাস পর উক্ত পলিথিন খুলে দিতে হবে।
৭। গাছে কাঁদি আসার আগ পর্যন্ত কচি পাতার গোড়ায় বিটল পোকা লুকিয়ে থাকে। ম্যালাথিয়ন অথবা নগস ভালভাবে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
৮। এ পোকা কার্বাইল গ্রুপের যেমন সেভিন ১.৫ গ্রাম প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে একবার কাদির প্রথম কলা বের হওয়ার পর একবার এবং সম্পূর্ণ কলা বের হওয়ার পর আরও একবার মোট ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
৯। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে আইসোপ্রোকার্ব গ্রুপের (যেমন মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি ০২ গ্রাম/ লিটার) অথবা প্রতি লিটার পানিতে ০২ গ্রাম একতারা ২৫ ডব্লিউজি  কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

Related Posts

0 Comments: