আলুর রোগ ব্যবস্থাপনা

আলুর রোগ ব্যবস্থাপনা


 

রোগের নাম : নাবি ধ্বসা

   

রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ : পাতার উপর ফ্যাকাশে অথবা ফিকে সবুজ রঙের গোলাকার অথবা এলোমেলো পানি ভেজা দাগ পড়ে। কুয়াশাছন্ন মেঘলা আবহাওয়ায় দাগ সংখ্যা ও আকার দ্রুত বাড়তে থাকে। গাছের পাতা ও কাণ্ড বাদামী থেকে কালচে আকার ধরণ করে। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে গাছের কাণ্ড ও সবুজ ফলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগের লক্ষণ দেখা দেবার ৩-৪ দিনের মধ্যে গাছ ঝলসে যায় ও দ্রুত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা
ব্যবস্থাপনা :
ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন (রিডোমিল গোল্ড অথবা ডাইথেন -এম-৪৫ ২০ গ্রাম ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পরপর স্প্রে করা ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রোগের নাম : আলুর শুকনো পচা রোগ
রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ : আলুর গায়ে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে। আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়। প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায়।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : আলূ
ব্যবস্থাপনা :
আলু ভালভাবে বাছাই করে সংরক্ষণ করতে হবে। যথাযথ কিউরিং করে আলু গুদামজাত করতে হবে। ডাইথেন এম ৪৫ দ্রবণ (০.২%) দ্বারা বীজ আলু শোধন করতে হবে। বস্তা, ঝুড়ি ও গুদামজাত আলু ৫% ফরমালিন দিয়ে শোধন করতে হবে।

 রোগের নাম : গোল আলুর স্ক্যাব রোগ

রোগের কারণ : ব্যাকটেরিয়া
ক্ষতির ধরণ : এ রোগের আক্রমণে আলুর গা এবড়ো থেবড়ো হয়ে যায়, দাগ পড়ে এবং আলুর গায়ে গর্তের সৃষ্টি হয়।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : আলূ
ব্যবস্থাপনা :
জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহার না করা। জমিতে শতাংশ প্রতি ১৮০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ করা। রোগ সহনশীল জাত যেমন বারি আলু ২৫, বারি আলু ২৮, বারি আলু ৩১, বারি আলু ৩৪, বারি আলু ৪১ চাষ করা যেতে পারে । জমিতে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি জিপসাম সার ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় সেচের তারতম্যের কারনে দাদ রোগ হতে পারে। সেজন্য আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত কোন অবস্থাতে যেন মাটির রসের ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আলু উত্তোলনের সময় মাটিতে রস বেশি থাকলে দাদ রোগ হতে পারে। গাছের বয়স ৭০ দিন হলে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে।


রোগের নাম : পাউডারী মিলডিউ
রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ : পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে । আক্রমণ বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় ।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা
ব্যবস্থাপনা :
সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন ( কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট ২০ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: গোল্ডাজিম বা এমকোজিম ১০ মিলি ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন । ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


রোগের নাম : ঢলে পড়া রোগ
রোগের কারণ : ছত্রাক /ব্যাকটেরিয়া
ক্ষতির ধরণ : প্রথমে কচি পাতা ঢলে পড়ে বা নিচের বয়স্ক পাতা বির্বণ হয়ে যায়। প্রথম দিকে গাছের অংশ বিশেষ, কয়েক দিন পরে পুরো গাছ ঢলে পড়ে। আক্রান্ত কান্ডের ভিতরের অংশ কাল বাদামি রঙ ধারন করে, পানি গ্রহণে বাঁধা দেয়। গাছের গোড়ার প্রায় ২ ইঞ্চি ডাল কেটে পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কাটা অংশ হতে কোন রস বের না হয় ,পানির রঙের কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে ছত্রাকের আক্রমণ বুঝতে হবে। বের হলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন ।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায় , চারা
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : কাণ্ড , পাতা
ব্যবস্থাপনা :
ছত্রাকের আক্রমণ হলে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন ( রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম) অথবা কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রানাশক যেমন (এইমকোজিম ৫০;অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি /২ মুখ ) ১০ লি পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন। আক্রমণ বোশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার পানিতে ২গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করুন। ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ হলে ক্ষেতের মাটিতে বিঘাপ্রতি ২ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।


রোগের নাম : আলুর ইয়োলো ভাইরাস রোগ
রোগের কারণ : ভাইরাস
ক্ষতির ধরণ : এর রোগ হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়।আক্রান্ত পাতা হলদে হয়ে যায়, বিচিত্র আকারের দাগ দেখা যায়, কুকড়ে যায় । গাছ ছোট হয়ে যায়।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায় , চারা
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা
ব্যবস্থাপনা :
জাব পোকা এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। কীটনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


রোগের নাম : আলুর কালো বা নরম পচা রোগ
রোগের কারণ : ব্যাক্টেরিয়া
ক্ষতির ধরণ : মাঠে গাছের গোড়ায় কালো দাগ পড়লে তাকে কালো পচা এবং গাছ ও টিউবার আক্রান্ত হলে নরম পচা রোগ বলে । আক্রান্ত গাছের টিউবার পচে যায় । সংরক্ষিত আলুতে এ রোগে আক্রান্ত আলু পচে যায় এবং পচা আলুতে এক ধরণের উগ্র গন্ধের সৃষ্টি হয়। চাপ দিলে আলু থেকে রস বেরিয়ে আসে যা অন্য সুস্থ আলুকে আক্রমন করে । আক্রান্ত অংশ বাদামি রংয়ের ও নরম হয় যা সহজেই সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : চারা , পূর্ণ বয়স্ক , ফলের বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : কাণ্ড , ফল
ব্যবস্থাপনা :
জমিতে কয়েকবার দানাদার ফসল চাষ করে আবার আলু চাষ করা। বিকল্প পোষক যেমন: আগাছা পরিস্কার রাখা ও ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ ধ্বংস করা ।


রোগের নাম : আগাম ধ্বসা
রোগের কারণ : ছত্রাক
ক্ষতির ধরণ : প্রথমে নিচের পাতায় ছোট ছোট কালো থেকে বাদামি চক্রাকার দাগ দেখা যায়। দাগের চারিদিক হলুদ সবুজ বলয় দেখা যায়। যা দেখতে আনেকটা গো- চোখের মত। আক্রমন বেশি হলে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে যায়। গাছ হলদে হয়ে পাতা নুয়ে পড়ে এবং অকালে মারা যায়।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : পূর্ণ বয়স্ক
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : কাণ্ড , পাতা , ফল
ব্যবস্থাপনা :
পাতায় ২/১টি দাগ দেখার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ইপ্রোডিয়ন বা মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ( যেমন: রোভরাল বা ডাইথেন এম ৪৫ ২০ গ্রাম ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন । ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


রোগের নাম : Hollow Heart
রোগের কারণ : অপরজীবী জনিত রোগ
ক্ষতির ধরণ : বড় বড় আলুর কেন্দ্রে অসম ফাঁপা অংশ সৃষ্টি হয়। পাশের কোষ সমূহ খসখসে ও বাদামি বর্ণ ধারণ করে যা বাহির থেকে বুঝা যায় না।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : আলূ
ব্যবস্থাপনা :
এই রোগের প্রতিকারের উপায় হল কম দূরত্বের বপন, সুষম সার ব্যবহার করা ও নিয়মিত সেচ প্রদান করা ।


রোগের নাম : ভিতরের কালো দাগ
রোগের কারণ : অপরজীবী জনিত রোগ
ক্ষতির ধরণ : টিউবারের কেন্দ্র কালো বা নীলচে কালো রং ধারণ করে। অক্সিজেনের অভাব বেশি হলে সমস্ত টিউবারই কালো হয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত অংশ সংকুচিত হয়ে ফেঁপে যেতে পারে।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : আলূ
ব্যবস্থাপনা :
এই রোগের প্রতিকারের উপায় হল উচ্চ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করা ও গুদামে বাতাস চলাচলে ব্যবস্থা রাখা।


Source: aisekrishi

Related Posts

0 Comments: